ইউএনওর বাসায় হামলা: আ.লীগের ১২ নেতাকর্মী গ্রেফতার
পিবিসি নিউজঃ বরিশাল নগরীর থানা কাউন্সিল (উপজেলা পরিষদ) কম্পাউন্ডে শোক দিবসের ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবু ও রুপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ শাহারিয়ার বাবুসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম জানান, দুটি মামলার মধ্যে একটির বাদী বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান এবং অপরটির বাদী পুলিশ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মামলায় তার বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর পুলিশের দায়ের করা মামলায় সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ওসি আরও জানান, দুটি মামলায় ৩০/৪০ জনের মতো নামধারী এবং কয়েকশ অজ্ঞাত আসামি রয়েছে। ঘটনার সময় সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লক্ষ্য করে আনসার সদস্যদের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীসহ পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শোক দিবসের ব্যানার খুলতে যান বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। এ সময় ব্যানার খোলার কারণ জানা নিয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সঙ্গে সিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কথা-কাটাকাটি হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই সময় ইউএনওর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে সেখানে উপস্থিত আনসার সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হলে উপস্থিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় হামলার চেষ্টা চালান। এ সময় আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়লে প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ চারজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যুবলীগ নেতা শাহরিয়ার বাবু, হারুন অর রশিদ ও তানভীরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীরা আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। রাতের এ ঘটনার পর থেকেই থমথমে বরিশাল নগরী। সিটি মেয়রের বাসার সামনে সকাল থেকে দেখা গেছে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি।
এদিকে বেলা পৌনে ১২টার দিকে নগরের কালিবাড়ি রোডস্থ মেয়রের বাসভবন হঠাৎ করেই ঘিরে ফেলে র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। এ সময় সেখানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন। মেয়রের বাসার ভেতরে নেতাকর্মীরা যেতে চাইলে তাতেও পুলিশ বাধা দেয়। তবে কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চলে যান।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে বরিশাল সকাল থেকে সব রুটের বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন নেতারা। পরে মেয়রের নির্দেশে বাস-লঞ্চ চলাচল শুরু করেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্রে করে বুধবার রাত ৩টার দিকে সাংবাদিকদের কাছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের রেগুলার কাজ। সেই অনুযায়ী আমার করপোরেশনের কর্মীরা রাতে উপজেলার পরিষদ চত্বরে বিভিন্ন ব্যানার অপসারণে যায়। এ সময় ইউএনও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের লোকজনের ওপর গুলি চালায়। এতে আমার প্রশাসনিক কর্মকর্তাও আহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয় আরও অনেকে। খবর শোনার পর আমি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের ঘটনাস্থলে পাঠাই বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য।তবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদেরও গালিগালাজ করে ইউএনও। পরবর্তীতে আমি ঘটনাস্থলে গেলে আমার ওপরও গুলি চালানো হয়। আমার শরীরেও গুলি লাগে। এরপরই আমার লোকজন আমাকে ঘিরে রাখে। আমার মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবুকেও আটকে রাখে।’
মেয়র বলেন, ‘আসলে আমি কষ্ট পেয়ে লজ্জায় সেখান থেকে বাসায় চলে আসি। প্যানেল মেয়রদের রেখে আসি, যাতে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। পরে শুনি পুলিশ গিয়ে আমার নেতা-কর্মীদের এলোপাতাড়ি মারধর করেছে। শত শত লোক আহত হয়েছে। এমন হলে আমি কীভাবে কী করব? আমাকে এমনভাবে কেন টার্গেট করা হচ্ছে? আমাকে কেন কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না? এগুলো আমার প্রশ্ন নয়, নগরবাসীর প্রশ্ন।
জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, আমরা সবাই এসেছি জনগণের সেবা করতে, আমরা সরাসরি সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর সব আদেশ-নির্দেশ পালন করি এবং আমরা জনগণের বন্ধু। সেখানে কোনো প্রশ্ন থাকলে বিভাগীয় কমিশনার স্যার কিংবা আমাকে জানাতে পারতো। এখানে একটি আলোচনার বিষয় ছিলো, কিন্তু সেটি না করে তাৎক্ষণিকভাবে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে সেটা আসলেই দুঃখজনক।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ফোর্স আসে থানা কাউন্সিলে। পরে পরিস্থিত স্বাভাবিক করতে যা যা প্রয়োজন ছিলো তা করা হয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, আগস্ট মাসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হচ্ছে শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে সবাই মিলে বরিশালবাসীর সেবা নিশ্চিত করবো। এ সময় এরকম একটি ঘটনায় আমরা সবাই ব্যথিত, মর্মাহত। আমাদের পুলিশ কমিশনার বলেছেন, ঘটনার তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ভালোভাবে অগ্রসর হোক, এগিয়ে যাক। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।