অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, সিআইডির এএসপিসহ ৫ জন কারাগারে
পিবিসি নিউজঃ দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে মা ও ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার ঘটনায় পুলিশ সিআইডির একজন এএসপি ও সিআইডির অপর ২ জন সদস্যসহ ৫ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার বিকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের আটক করা হয় এবং অপহৃত মা ও ছেলেকে উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে অপহৃত জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে বুধবার চিরিরবন্দর থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ এ মামলায় ৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে বিকালে আদালতে সোপর্দ করেছেন। ৫ আসামির মধ্যে আদালত একজনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে ৫ জনকেই কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- রংপুর সিআইডির এএসপি সারোয়ার কবীর, এএসআই হাসিনুর রহমান, কনস্টেবল আহসানুল হক ফারুক ও মাইক্রোবাস চালক হাবিব। পরে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ফসিউল আলম পলাশ নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
আর যাদের অপহরণ করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে তারা হলেন- দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার লুৎফর রহমানের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৪২) ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর (২৫)।
জাহাঙ্গীরের খালাতো ভাই শামসুল ইসলাম মানিক জানান, সোমবার রাত ৮টায় একটি মাইক্রোবাস যোগে তার খালু লুৎফর রহমানের বাড়িতে যায় একদল মানুষ। এসময় তারা সিআইডির পরিচয়ে লুৎফর রহমানকে খুঁজতে থাকে। লুৎফর রহমানকে না পেয়ে লুৎফর রহমানের স্ত্রী জহুরা খাতুন ও তার ছেলে জাহাঙ্গীরকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় তারা।
পরের দিন মঙ্গলবার সকালে মা ও ছেলেকে ছেড়ে দেয়ার জন্য জাহাঙ্গীরের ফোন থেকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রথমে ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়। পরে ২০ এবং সর্বশেষ ৮ লাখ টাকা দাবি করা হয়।
জাহাঙ্গীরের পরিবারের লোকজন বিষয়টি চিরিরবন্দর থানায় জানায়। মঙ্গলবার দাবিকৃত টাকা নিয়ে জাহাঙ্গীরের স্বজনদের নিয়ে চিরিরবন্দর থানার এসআই তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন ঠিকানা অনুযায়ী রানীরবন্দর এলাকায় যান।
সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা থাকার পর তাদের বলা হয়, কাহারোল উপজেলার দশমাইল এলাকায় তেলের পাম্পের কাছে যেতে। এভাবে কয়েকবার জায়গা বদল করে তাদের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বাঁশেরহাট এলাকায় যেতে বলেন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। কিন্তু সেখানে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা দশমাইলের দিকে রওনা দেন। দশমাইলের স্থানীয় লোকজন ও কোতোয়ালি পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে চিরিরবন্দর থানা পুলিশ ৪ জনকে আটক করে এবং অপহৃত মা ও ছেলেকে উদ্ধার করে।
আটকের পর জানাজানি হয়, আটককৃতদের মধ্যে ৩ জন রংপুর সিআইডি পুলিশের সদস্য। আটকের পর মঙ্গলবার রাতেই তাদের দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
এ ব্যাপারে রংপুর সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতাউর রহমান জানান, তিনি শুনেছেন যে দিনাজপুরে সিআইডির তিন সদস্য আটক হয়েছে। এদের মধ্যে রংপুর সিআইডির এএসপি সারোয়ার কবীর, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসান-উল হক ফারুক।
তিনি বলেন, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসান-উল ফারুক ছুটিতে ছিলেন এবং এএসপি সারোয়ার কবীর ডিউটিতে ছিলেন। তবে এএসপি সারোয়ার কবীর কাউকে না জানিয়েই দিনাজপুরে গেছেন। তারা যদি দিনাজপুরে গিয়ে অপহরণ বা কোনো বেআইনি কাজ করে থাকে, তাহলে তদন্তসাপেক্ষেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে অপহরণ থেকে উদ্ধারকৃত জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে বুধবার চিরিরবন্দর থানায় ১১ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় রংপুর সিআইডির এএসপি সারোয়ার কবীরসহ ৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার বিকালে দিনাজপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিশির কুমার বসুর আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতের বিচারক মামলার অন্যতম আসামি ফসিউল আলম পলাশের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর গ্রেফতারকৃত ৫ আসামিকেই কারাগারে প্রেরণ করা হয়।