স্বামীর ঘুসের টাকায় কোটিপতি স্ত্রী
পিবিসি নিউজঃ বেসিক ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম এবং ব্রাঞ্চ ইনচার্জ (চাকরিচ্যুত) সিপার আহমেদের ঘুষ-দুর্নীতির অবৈধ টাকায় কোটিপতি হয়েছেন তার স্ত্রী হাবিবা কুমকুম আহমেদ রত্মা। কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছেন স্বামীর অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে।
সম্প্রতি আদালতে এই দম্পতির বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিটে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন আদালতে এ চার্জশিট দেন। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে. এম. ইমরুল কায়েশ এ চার্জশিট দেখেছেন।
চার্জশিটে বলা হয়, আসামি রত্নার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য তিন কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২১১ টাকা। এরমধ্যে তার মালিকানাধীন বনানীর দুই কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট ছাড়া বাকি সম্পদের মূল্য এক কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২১১ টাকা।
রত্না বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে কাজ করাসহ কিছু ব্যবসা ও ঋণের কথা উল্লেখ করেছেন, যার একটি বড় অংশ তিনি আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন। ওই আয়গুলো বৈধ ধরে নেওয়া হলেও বনানী আবাসিক এলাকায় ১৯২০ বর্গফুট বিশিষ্ট ফ্ল্যাটটি (মৌজা-লাল সরাই, ব্লক-এফ, রোড নং-৪, বাড়ি নং-৩৭) তিনি দুই কোটি টাকা মূল্যে কিনেছেন। কিন্তু বনানীর দুই কোটি টাকা মূল্যের ওই ফ্ল্যাটটি রত্নার স্বামী সিপার আহমেদ অবৈধভাবে কিনেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুস-দুর্নীতির মাধ্যমে সিপার অবৈধভাবে ওই অর্থ উপার্জন করেন।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, দি প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখার গ্রাহক সাবিক এন্টারপ্রাইজ (হিসাব নং-১০২-১৩১-১৬৩-৬)। এই হিসাবটি খোলা হয় ২০০৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেসময় প্রিমিয়ার ব্যাংকের ওই শাখায় কর্মরত ছিলেন সিপার আহমেদ। তিনিই হিসাবটির অনুমোদনকারী কর্মকর্তা। আর সিপার আহমেদের ছোট ভাই শাকিল আহমেদ ওই হিসাব পরিচালনাকারী।
সাবিক এন্টারপ্রাইজ নাম শুনলেই মনে হবে যে এটি একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। অথচ হিসাব খোলার ফর্মে অর্থের উৎসের ঘরে কিছুই লেখা নেই।
হিসাব খোলার পর থেকে ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবটিতে সর্বোচ্চ স্থিতি ছিল ১০ লাখ ৪৫ হাজার ৪৪০ টাকা। যা হিসাব খোলার দুদিন পর আট লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ জমার কারণে হয়েছিল। অথচ বেসিক ব্যাংকের চারটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা হওয়ায় অল্প কয়েক দিনেই হিসাবটির চেহারা পাল্টে যায়।
২০১১ সালের ১২, ১৪, ১৯ ও ২১ সেপ্টেম্বর পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই হিসাবে যথাক্রমে ৬০ লাখ, ৫০ লাখ, ৩২ লাখ ও ৮০ লাখ টাকা জমা হয়।
৫ দিনের ব্যবধানে তিন কিস্তিতে দুই কোটি টাকা বনানীর ফ্ল্যাট বাবদ এশিউর প্রপার্টিজ লিমিটেডকে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এত বড় অংকের লেনদেন ওই হিসাবটিতে আর কখনই দেখা যায়নি।
বেসিক ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আবেদনকারীর নাম-পরিচয় গোপন করে ইস্যুকৃত এসব পে-অর্ডারের সবগুলোতেই সিপার আহমেদের হাতের লেখা। যা খালি চোখে বুঝাই যায় না। কিন্তু নগদ টাকা কোথায় থেকে এসেছে এবং প্রকৃত জমাদানকারীর পরিচয় আবেদন দেখে বুঝা কষ্ঠসাধ্য। ওই সময় সিপার বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখার ম্যানেজার ছিলেন।
ওই ঋণ হিসাবগুলো বর্তমানে শ্রেণিকৃত এবং এদের সবার বিরুদ্ধেই দুদক মামলা করেছে যা তদন্তাধীন রয়েছে। সিপার আহমেদকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি। এসব অর্থের বৈধ কোনো উত্সের সন্ধানও তিনি দিতে পারেননি।
সুতরাং রত্নার মালিকানাধীন ফ্ল্যাটটি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত দুই কোটি টাকা দিয়ে কিনে তিনি ভোগ দখলে রেখেছেন। তার স্বামী সিপার আহমেদ অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে রত্নাকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন। স্বামীর অবৈধ সম্পদ রত্না তার নিজ নামে রেখেছেন। চার্জশিটে ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ১৭ জুলাই শুধুমাত্র সিপারের স্ত্রী রত্নার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। দুদকের উপ-পরিচালক জি এম আহসানুল কবীর বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় সিপারকে আসামি করা না হলেও চার্জশিটে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এক কোটি ৪০ লাখ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ মামলাটি করা হয়। চার্জশিটে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।