জেএমবি’র শীর্ষস্থানীয় নেতা আটক
পিবিসি নিউজঃ রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় উগ্রবাদী আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি থেকে একজনকে গ্রেফতারের পর অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-২)। আটককৃত এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টার জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা বলে জানিয়েছে র্যাব। অভিযান শেষে ব্রিফিংয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে অভিযান শেষ হয় বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, বসিলার ব্লক -এ’র ৪ নম্বর সড়কের চারতলা বাড়ি থেকে সকাল ৮টার দিকে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি হলেন জেএমবির শীর্ষ স্থানীয় নেতা এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টার। এ বিষয়ে বিকেলে র্যাবের ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথমে মোহাম্মদপুর বসিলার চারতলা বাড়িটার দ্বিতীয় তলা ভাড়া নেয় তারা। ভাড়া নেয়ার সময় উগ্রবাদীরা পরিচয় দেন যে তারা একজন হলো প্রিন্টিং প্রেসের মালিক ও অন্যজন তার সহযোগী। এ সময় তারা সাত দিন সময় চায় এনআইডি ও বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করার জন্য।
ওই বাড়ি দারোয়ানের বরাতে র্যাব জানায়, দারোয়ান গতকাল বুধবার রাতে এমদাদুলকে জিজ্ঞাসা করে যে তার স্ত্রী কোথায়। তখন সে বলে আজকে তার স্ত্রীকে বাসা থেকে নিয়ে আসবে।
র্যাব বলছে, গত কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে যেসব উগ্রবাদীকে আটক করা হয়েছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতেই জানা যায়, এই এমদাদুল হক জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা। তাকে ধরতে জামালপুরে অভিযান চালানো হয় কিন্তু পাওয়া যায়নি।
পরে ওই উগ্রবাদীদের তথ্যের ভিত্তিতে খোঁজ পায় যে বসিলার এই বাসাতে অবস্থান করছে তারা। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে এসে অভিযান চালায়। ওই বাসায় জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করার একপর্যায়ে দেখা যায় দ্বিতীয়তলার একটি দরজা কেউ খুলছে না। তখন র্যাব সদস্যরা ওই পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে
এরপর সকাল ৮টা থেকে পুরো অভিযান শুরু হয়। সে সময় বোম ডিসপোজাল ও ডগ স্কোয়াডের সদস্যরা ভেতরে যান। পরে ৯টার দিকে তারা সে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। তখন দেখা যায় কালো কাপড়ে মোড়ানো একটি বাক্সে বিস্ফোরক, অস্ত্র, গোলাবারুদ, টাকা এগুলো উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
সবশেষ সাড়ে ৯টার দিকে অভিযান শেষ ঘোষণা করে র্যাব। এ সময় সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। কৌতূহল উৎকণ্ঠা নিয়ে সড়কে দু’পাশে অবস্থান নেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের সরিয়ে সতর্ক অবস্থান নেন র্যাব সদস্যরা।
এর আগে শনিবার ভোরে ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর এলাকায় উগ্রবাদীদের সাথ র্যাব সদস্যদের গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় অস্ত্রসহ চার উগ্রবাদীকে গ্রেফতার করে র্যাব।
র্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদস্যরা জানতে পারেন, ময়মনসিংহের খগডহরের ডোলাদিয়া এলাকায় উগ্রবাদী সংগঠনের সদস্যরা অবস্থান করছে।
এমন খবরে শনিবার ভোরে ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড়ঘেঁষে অবস্থিত ডোলাদিয়া এলাকা ঘিরে রাখে র্যাবের একটি দল। পরে সেখানে র্যাবের সাথে উগ্রবাদীদের’ গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে।
এর কিছুক্ষণ পর ব্রহ্মপুত্র নদীতে থাকা একটি নৌকা থেকে চার উগ্রবাদীকে অস্ত্রসহ আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র, গুলি ও ককটেল উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের দাবি, সেই নৌকা থেকেই র্যাবের দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকে উগ্রবাদীরা।
স্থানীয়রা জানান, আটক চার উগ্রবাদীকে কখনোই কেউ দেখেননি। কারণ তারা অন্য এলাকা থেকে এসে এখানে অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়া ভোরে র্যাব যখন তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তাদের প্রথম দেখেন স্থানীয়রা।
পরে ওইদিন দুপুরে র্যাবের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, জামালপুরের একটি গোপন আস্তানায় বিশেষ প্রশিক্ষণ করে উগ্রবাদীরা ময়মনসিংহে ব্যাংকসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, স্বর্ণের দোকান টার্গেট করে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল।