‘আমি সভাপতি, কার কাছে অনুমতি নেব?’
পিবিসি নিউজঃ বোয়ালী উচ্চ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় শত বছরের পুরানো দুটি জাম গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার সকালে এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে বোয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পটুসহ জমিদাতা আরও ৪/৫ জন স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে ওই দুই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেউই মুখ খুলছেন না।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল গণি ভূঁইয়া কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হলেও বর্তমান কমিটিতে প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে রয়েছেন। তিনি উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের বোয়ালী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বোয়ালী গ্রামের বাসিন্দা।
বোয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পটু জানান, প্রায় শত বছরের পুরানো দুটি জাম গাছের মূল্য লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভাপতির একক ক্ষমতায় নামমাত্র মূল্যে গাছ দু’টি বিক্রি করেছেন।
গাছ কাটার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল গণি ভূঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আমার ক্ষমতায় গাছ কেটেছি, পারলে কেউ কিছু করুক। ইউএনও সাহেবও বিষয়টি জানেন।
বোয়ালী উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরী মো. মফিজ উদ্দিনের বরাত দিয়ে প্রধান শিক্ষক মাহবুবা বেগম বলেন, গত ০৮ সেপ্টেম্বর দপ্তরী স্কুলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করতে যান। এ সময় তিনি দেখেন বোয়ালী উচ্চ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের সামনে প্রায় শত বছরের পুরানো দুটি জাম গাছ কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরে বিষয়টি আমাকে ফোনে অবগত করেন। আমি দপ্তরীর কাছে ফোনে জানতে পেরে বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষষের সভাপতি আব্দুল গণি ভূঁইয়াকে ফোন দিলে তিনি গাছ কাটার বিষয়টি জানেন বলে জানান।
বোয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. রিপন বলেন, এই গাছ দুটি বোয়ালী উচ্চ বিদ্যালয়ের। আমি এ ব্যাপারে কোন কিছু জানি না।
গাছ কে বিক্রি করছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গাছ কাটার সময় আমি এলাকার বাইরে ছিলাম। এলাকায় এসে দেখি ছ-মিলের মালিক শফিক গাছ দুটি নিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বোয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সুফিয়ান বলেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার দিন এসে দেখি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে রোপণ করা দুটি জাম গাছ কে বা কারা কেটে নিয়ে গেছে।
তবে বিষয়টি তিনি উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানছুরা আক্তারকে অবগত করেছেন বলেও জানান।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানছুরা আক্তার বলেন, আমি বিষয়টি মৌখিক ভাবে জেনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার স্যারকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার বিষয়টি মৌখিক ভাবে জেনেছেন বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে নিয়মানুযায়ী বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের রেজুলেশন করে উপজেলা পর্যায়ের কমিটিকে অবগত করতে হয়। এরপর উপজেলা কমিটির সভা ডেকে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের সভাপতি এর কোনটিই করেননি।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও বোয়ালী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যষের সভাপতি আব্দুল গণি ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি। আমি কার কাছ থেকে অনুমতি নেব? বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবন নিমাণের বরাদ্দ হয়েছে, তাই কেটে ফেলেছি।