‘দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে’
পিবিসি নিউজঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘খায় কারা আওয়ামী লীগের লোকেরা খায়। তারা সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়ায় আবার টোল আদায় করে। দেশের মানুষের এখন নাভিশ্বাস উঠেছে।’
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চাল, ডাল, তেল, লবনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সীমাহীন মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে, বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন করেন, আপনারা কি বাজারে যান, সবাই হ্যাঁ জবাব দিলে, তিনি আবার প্রশ্ন করেন, বাজারে কি আগুন দেখতে পান চাল-ডাল-তেলের দাম কমছে না বাড়ছে বাড়ছে বন্ধুগণ। ডিম, চিনি, কেরোসিন তেল, শশা, কাঁচা বাজার, একটা জিনিসও আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই।
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন আর ভালো খেতে পারে না। খায় কারা, আওয়ামী লীগের লোকেরা খায়। তারা সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় আবার চাঁদা নেয়। উত্তরবঙ্গ থেকে যে সবজি আসে সেই ট্রাক থেকে পথে পথে টোল আদায় করে। দেশের মানুষের এখন নাভিশ্বাস উঠেছে। তাদের শ্বাস গলায় আটকে গেছে, আর পারে না। তারা এখন বার বার বলে আর কত দিন, আর কত অত্যাচার নির্যাতন আমরা সহ্য করবো।’
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একটা কথা বলেছেন যে ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এটা দেখতে চান। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, সবাই ভোট দিতে পারবে সেটা দেখতে চান। ’ ভূতের মুখে রাম নাম। তিন তিনটা ইলেকশন ধ্বংস করলো, ভোটাধিকার পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শরীয়তপুরের এমপি বলেছেন, আমি ঠিক করে দেব কে চেয়ারম্যান হবে কে মেম্বার হবে। অন্য কেউ দাঁড়াতে পারবে না। আমরা চিন্তাই করতে পারি না, ১৯৭১ সালে এই গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই করেছিলাম। আজকে গণতন্ত্রকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়ে তারা একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেছে। আজকে আওয়ামী লীগের নেতা, পাতি নেতাদের দৌড়াত্মে কেউ আর থাকতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভিন্ন মত সহ্য করতে পারে না, তারা কারও সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। সহনশীলতা বলতে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করছে, সেটার প্রতিবাদে আমরা আমাদের দলীয় অফিসের সামনে একটা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিলাম। সভা শেষে আমাদের ছেলেরা যখন চলে যাচ্ছিল, তখন পেছন থেকে লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস মেরে ৫০ জনের মতো আহত করেছে। উল্টো তারা আবার দেড় হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এত ভয় পান কেন, ভয় পান এ জন্য যে আপনাদের পায়ের নীচে মাটি নেই। যে দিন সময় হবে, জনগণ যে দিন রাজপথে নামবে, সে দিন আপনারা পালাবার পথও খুঁজে পাবেন না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এই সরকার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জনগণের পকেট কেটে নিজেদের পকেট ভারী করছে। হাজার হাজার কোটিপতি তৈরি হচ্ছে আর মানুষ দিন দিন গরীব হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে একটি খবর বেড়িয়েছে আপনারা খেয়াল করেননি। সরকার বলছে দেশের রিজার্ভ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বেড়ে গেছে। কিন্তু আইএমএফ বলেছে ‘সরকার ২০২০ সালের রেমিটেন্স বাড়ার যে হিসাব দিয়েছে সেখানে সাত বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে বলেছে। দেশের মানুষের সঙ্গে, বিশ্বের সঙ্গে তারা এভাবেই প্রতারণা করছে। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের মূল চরিত্র।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পরিস্কার করে বলেছি আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন হতে হবে নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তবেই এদেশে নির্বাচন হবে, অন্যথায় নির্বাচন হবে না।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী।