‘বাবারে তুমি কাফনের কাপড় কেন পরলা’
পিবিসি নিউজঃ কথা ছিল এবার বিদেশ থেকে বাড়িতে এসে বিয়ে করবেন। বাবা-মায়ের জন্য সুন্দর করে বানাবেন বাড়ি। কিন্তু যে বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা সেখানে এখন চলছে লাশ দাফনের প্রস্তুতি। নৌ-প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান ঠিকই বাড়িতে ফিরছেন, তবে লাশ হয়ে।
‘ওরে হাদিসুররে তুমি কেন আমারে বললা যে আমি আইসা বিয়ে করবো। বিয়ের জন্য পাত্রী দেখে রাইখো। কেন বললা। তুমি কাফনের কাপড় কেন পরলা। এখন আমি কি বলে নিজেরে বুঝ দিমু, আরে বাবারে তুমি কেন, তুমি কেন আমারে এই কথা বললা।’ বিলাপ করে শাহজালাল বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের সামনে বসে কথাগুলো বলছিলেন ইউক্রেনে নিহত প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের খালা মমতাজ বেগম। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তার সাথে কথা হয়েছিল হাদিসুরের।
এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, হাদিস আমাকে ফোন করে কয় খালা তুমি জায়গা আছো কেন। ঘুমাইয়া যাও তোমার শরীর খারাপ। খালামণি তোমার অবাধ্য হমু না। এবার আইসা বিয়া করুম। বাবারে তুমি শেরওয়ানির বদলে সাদা কাফনের কাপড় পরলা।
তিনি আরও জানান, হাদিসকে তিনি তার ছেলের মতোই লালন-পালন করেছেন। কখনো বোনের ছেলে বলে মনে করেননি। তারা খালাতো ভাইরা আপন ভাইয়ের মতো ছিল।
এ সময় পাশে বসে থাকা হাদিসের চাচাতো ভাই সোহাগ হাওলাদারও কান্নায় ভেঙে পড়েন। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘তুই কেন জাহাজের উপরে গেলি রে ভাই।’
হাদিসের লাশ গ্রহণ করার জন্য হাদিসের ভাই, খালাতো ভাই, খালা, চাচা, চাচাতো ভাইয়েরা বিমানবন্দর এসেছেন। বারোটা ছয় মিনিটে শাহজালাল বিমানবন্দরে হাদিসের লাশ নিয়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্স এর একটি বিমান অবতরণ করে। লাশ গ্রহণ করার জন্য বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকেছেন তার ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স ও চাচা হারুনুর রশিদ।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’। সেখানে নোঙর করা অবস্থায় গত ২ মার্চ জাহাজটি রকেট হামলার শিকার হয়। ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফ।