উত্তরায় দালাল নির্ভর বেসরকারি হাসপাতাল, জিম্মী রোগীরা
পিবিসি নিউজঃ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে উত্তরা আধুনিক মেডিকেলের ইমারজেন্সিতে কর্মরত কর্মচারী ও ওয়ার্ড বয়ের যোগসাজশে বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছে রোগীরা।
রোগী ভর্তির নাম করে পরিচয় গোপন রেখে কয়েকজন ওয়ার্ড বয়ের সঙ্গে কথা হলে জানা যায় রোগী ভাগানোর আদ্যোপান্ত।
তারা জানায়, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলে দালালদের কোন লাভ নেই। সে জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীদের ভুলিয়ে ভালিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী নিতে পারলে একটা মোটা অঙ্কের টাকা পায় দালালরা।
কিভাবে কমিশন দেয়া হয় জানতে চাইলে তারা জানায়, রোগীর অবস্থা বুঝে দেয়া হয় কমিশন। রোগী ভেদে পাওয়া যায় ১৫-২০ হাজার টাকা। যার প্রতিটি টাকা কৌশলে কেটে নেয় হয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা রোগীর স্বজনদের থেকে।
হাসপাতালের একটি সূত্র বলছে, এখানে প্রতিটি স্তরে চলে সকল দালালদের টাকা আদান-প্রদান। হাসপাতালটির ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাসপাতালের দালাল চক্রের আনাগোনা থাকে দিনে রাতে। তাদের সঙ্গে আছে অ্যাম্বুলেন্সের চালকরাও।
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে কমিশন ভিত্তিতে নানা কৌশলে ওয়ার্ড বয়দের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা রোগীদের নিয়ে যাচ্ছে উত্তরার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। অল্প খরচে চিকিৎসার আশা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। পরবর্তীতে চিকিৎসা শেষে গলা কাটা একটা বিল ধরিয়ে দেয় রোগীর স্বজনদের হাতে। বিল দিতে না পারলে অনেক সময় রোগীদের আটকেও রাখা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে সকল রোগী জরুরী বিভাগে সেবা নিতে আসেন সেই সকল রোগীদেরকে জরুরী বিভাগের ওয়ার্ড বয় সাইদুল বাশার, আলামিন, সমির বৈদ্য, শামীম মিয়া, ফারুক নানান কৌশলে ভুলিয়ে ভালিয়ে তুলে দেয় হাসপাতালের গেটের বাইরে থাকা বিভিন্ন হাসপাতালের দালাদের হাতে। পরে দালালদের থেকে প্রতি রোগী অনুযায়ী বুঝে নেয় কমিশন।
জানা যায়, জরুরী বিভাগ থেকে মূল হোতা ওয়ার্ড বয় সাইদুল বাশার রোগী ভাগানোর বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। জুনিয়র ওয়ার্ড বয়দেরকে দিয়ে এই রোগী ভাগানোর কাজ করতে বাধ্য করায়।
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ওই হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির কিছু সদস্য এই রোগী ভাগানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। সমিতির সঙ্গে চুক্তি করেই জরুরী বিভাগের ওয়ার্ড বয় থেকে দালালরা রোগী নিয়ে যায় উত্তরার আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। মেডিকেলের কর্মকর্তা কর্মচারী সমিতিকে দালালরা প্রতি মাসে ৫০ থেকে এক লক্ষ টাকা দিয়ে থাকে।
রোগী ভাগানোতে কেউ বাধা দিলে বা নিষেধ করলে তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি, মারধর ও হত্যার চেষ্টা করা হয়। এ বিষয়ে সমিতির সদস্যসহ বেশ কিছু রোগীর দলালদের নামে রয়েছে মামলা। যেটি বর্তমানে পিবিআই’র তদন্তাধীন।
উত্তরা আধুনিক মেডিকেলে রোগী ভাগানো নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতাল গেটে ঘুরতে দেখা যায় দালালদের। রোগী ভাগানোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালের দালাল চক্রগ্রুপ অন্য দালালদের সঙ্গে মারামারি ও তর্ক-বিতর্ক করে থাকে।তাদের মধ্যে মূল দালাল লেকভিউ হাসপাতালের মার্কেটিং এর রাজু ও তার দুই সহযোগী পলাশ ও সম্রাট। তারা হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ও সমিতির সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হাসপাতাল থেকে নানা কৌশলে রোগী নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ডা. সাব্বির আহমেদ অবজারভার প্রতিবেদককে বলেন, ইমার্জেন্সি বিভাগের কোন কর্মচারী-কর্মকর্তা যদি এমন নেক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতিও যদি এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে ছাড় দেয়া হবে না। শুধু তাই নয় ইমার্জেন্সি বিভাগের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের কিছু দিন পর পর রদবদল করে দেয়া হবে।