ভারতে গ্রেফতার পি কে হালদার
পিবিসি নিউজঃ বাংলাদেশ থেকে হাজার কোটি পাচারকারী এনআরবি গ্লোবালের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) গ্রেফতার করেছে ভারতীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পি কে হালদারসহ এ পর্যন্ত ৬ জন বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় এক সাংবাদিক বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে জানান, এদের কাছ থেকে আরও তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। কোথায় কোথায় পি কে হালদারের সম্পত্তি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানার চেষ্টা করছে।
এর আগে, গত ১৩ মে ভারতের অন্তত ১০টি স্থানে অভিযান চালিয়ে পি কে হালদারের ২২টি বাড়ির সন্ধান পায় অভিযানকারী দল।
ওই অভিযানে পি কে হালদারের সহযোগী স্বপন মিত্র ও তার দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া মুর্শিদাবাদের কাটুয়া থেকে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে পি কে হালদারের সহযোগী এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পি কে হালদারের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পি কে হালদারকে ধরতে অভিযান চালায়।
ভারতের পাশাপাশি কানাডা ও ইন্দোনেশিয়াতেও পি কে হালদারের সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র নিশ্চিত করেছে।
কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধার বিশাল বিলাসী বাড়ির সন্ধান পায় ভারতের ইডি।
সুকুমার মৃধা পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। পি কে হালদার ও সুকুমার মৃধা অশোকনগরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী।
ভারতী পল্লি এলাকার পাশে নবজীবন পল্লিতে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি পাওয়া গেছে পি কে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদারের। ঠিক তার পাশেই আরেক বিলাসবহুল বাগানবাড়ি সুকুমার মৃধার। মাছ ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও এলাকাবাসী সুকুমার মৃধার বিলাসী জীবন দেখে সব সময়ই সন্দেহ করত।
এই এলাকাতেই একাধিক সম্পত্তি ক্রয় করেছে হালদার-মৃধা জুটি। এর মধ্যে শুক্রবার শুধু অশোকনগরেই তিন বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। যার একটিতে এতদিন একাই থাকতেন সুকুমার মৃধার জামাতা সঞ্জীব হালদার।
পি কে হালদারের আরেক সহযোগী স্বপন মিত্রের বাড়িতেও অভিযান চালায় ইডি। অশোকনগরের একই এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিত্র অর্থ পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত। তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক নথি পাওয়া গেছে বলে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আটক করে ইডি।
অশোকনগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন এলাকা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অভিজাত এলাকায় পিকে হালদার চক্রের একাধিক বাড়ি ও অফিস রয়েছে।
বহুল আলোচিত অর্থ পাচার মামলার আসামি পি কে হালদার বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। তাকে প্রত্যর্পণের জন্য কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাঝে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানতে পারে পলাতক পি কে হালদারের বিপুল সম্পদ রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশেকনগরে আছে পি কে হালদারের বাড়ি। এ ছাড়া ভারতের আরও কয়েকটি রাজ্যে তার বাড়ি আছে।
এর পরেই দুদক পি কে হালদারের বিষয়ে তথ্য পাঠায় ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এর কাছে।
হাজার কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করে দেশত্যাগী প্রশান্ত কুমার হালদারের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করত বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা।
পি কে হালদারের ক্ষমতার উৎস ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। বিভিন্ন সময়ে পি কে হালদার আর্থিক সুবিধা ও মূল্যবান উপহার দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের ওই দুই কর্মকর্তাকে বশে রেখে দুর্নীতির মাধ্যমে অবাধে অর্থ লোপাট করেছে।
পলাতক পি কে হালদারের আরেক সহযোগী সুকুমার মৃধাও বাংলাদেশ ত্যাগ করে। তার একটি বাড়ি আছে পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরে। পি কে হালদার ও সুকুমার মৃধার অবৈধ লেনদেন ছড়িয়ে আছে ঢাকা কলকাতা, হাওড়া, চেন্নাই, মুম্বাইয়ে। বাংলাদেশ থেকে অবৈধ টাকা ভারতে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় পি কে হালদার সম্পত্তি কিনেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বরিশালের পিরোজপুরে বাসিন্দা পি কে হালদার। তার বাবা প্রয়াত প্রণবেন্দু হালদার পেশায় ছিলেন গ্রাম্য বাজারের দর্জি। মা শিক্ষিকা। ছেলের এমন দুর্নীতির পর পি কে হালদারের মা ভারতের অশোকনগরে আরেক ছেলে প্রাণেশ হালদারের বাড়িতে চলে গেছেন।
পি কে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন সুকুমার মৃধা। পি কে হালদারের সঙ্গে যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সুকুমার মৃধাকে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে। দুদক তাকে গ্রেফতার করেছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।