প্রতিবেশীর সন্তানকে নিজের দেখিয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে শিক্ষিকা
পিবিসি নিউজঃ প্রতিবেশীর সন্তানকে নিজের দেখিয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা। এ বিষয়ে তাকে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে।
এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মুনিয়ারহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
জানা যায়, বদলী নিয়ে ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী মুনিয়ারহাট বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা আলেয়া সালমা। ২০১৯ সালে তৃতীয় বারের মত বিয়ের পিড়িতে বসেন তিনি। এরপর থেকে তৃতীয় স্বামীর সাথে তিনি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউনিয়নে বসবাস করে আসছেন।
করোনায় দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরে খুললেও তিনি প্রতিষ্ঠানে অনিয়মিত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি গর্ভবতী না হয়েও গত ১৩ মার্চ সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন দেখিয়ে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করেন। শরীরে মাতৃত্বের কোন লক্ষণ ও পরিবর্তন দেখতে না পাওয়ায় সহকর্মীদের সন্দেহ হয়। এ কারণে তিনি ওইদিন একটি শিশু সন্তান কোলে নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে ছুটির আবেদন জমা দেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন শারমীন নামের এক নারী। পরে জানা যায়, শিশুটি ছালমার বর্তমান স্বামীর পাশের বাড়ির দম্পতি আনিছুর রহমান পাশা ও শারমীনের দ্বিতীয় সন্তান।
এ বিষয়ে শারমিন জানান, ‘সালমা আমার আত্মীয়ের মতো। আমি সন্তানসহ তার সাথে কুড়িগ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার বাচ্চা তার হিসেবে চালিয়ে দিয়েছেন কিনা সেটা আমি কিভাবে বুঝবো।
তিনি আরো জানান, তার বড় মেয়ের নাম আফিফা। বয়স পাঁচ বছর। আর ছোট মেয়ের নাম আশফিয়া। গত মার্চ মাসে আশফিয়ার জন্ম হয়েছে।
কয়েক মাস যেতে না যেতেই বিষয়টি প্রকাশ পায়। অভিযোগ রয়েছে ছুটি নেয়ার বিষয়টি প্রধান শিক্ষক খাদিজা সুলতানা, উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী ও হিসাবরক্ষক (বড়বাবু) আজিজার রহমান, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নোমান নওশাদ আলীর যোগসাজসে এ ধরণের অনৈনিক ছুটিতে আছেন ওই শিক্ষিকা।
মুনিয়ারহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবক জানান, মাঝে মধ্যে আলেয়া আপা স্কুলে আসতেন। আমাদের সাথে দেখা হত। তাকে দেখে সন্তান সম্ভাবা মনে হয়নি।
অভিভাবক ফরিদুল ইসলাম, আব্দুল মমিন, ফরিদা বেগম জানান, অলেয়া ছালমা আপা ভুয়া সন্তান দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন। আর এসব কিছু করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক ও অফিসাররা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়টির অন্য শিক্ষকরা জানান, নাগেশ্বরী থাকা অবস্থায় তিনি আসতেন। তবে বগুড়া যাওয়ার পর তাকে আসতে দেখতাম না। সন্তান হওয়ার বিষয়টি তারা শুধু শুনেছেন, দেখেননি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আলেয়া ছালমার ঘরে প্রথম স্বামীর ২ সন্তান, দ্বিতীয় স্বামীর ১ সন্তান রয়েছে। তৃতীয় (বর্তমান) স্বামীর ঘরে কোন সন্তান না থাকলেও তিনি নিজেকে ৪ সন্তানের জননী হিসেবে দাবী করেন। তবে শিক্ষা অফিসে শুধুমাত্র প্রথম স্বামীর দুই সন্তানের নাম অন্তর্ভূক্ত করা আছে। সর্বশেষ যে শিশুটিকে নিজের সন্তান দেখিয়ে আলেয়া সালমা ছুটি ভোগ করছেন, সে সন্তান তার নয়। সে শিশুটি ছালমার বর্তমান স্বামীর বাড়ির পাশের দম্পতি আনিছুর রহমান পাশা ও শারমীনের দ্বিতীয় সন্তান।
এ বিষয়ে আলেয়া সালমা জানান, কি হয়েছে না হয়েছে সবাই জানেন, আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক, এ.টিও, সবাইকে ম্যানেজ করে আমি ছুটিতে আছি। শিক্ষা অফিসের বড়বাবু এসব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
তিনি মোবইল ফোনে আরো বলেন, আপনারা নিউজ করে আমার কিছুই করতে পারবেন না। যতদিন আমার ট্রান্সফার হবে না, ততদিন আমি ছুটি নিয়েই চলব। আমাদের সিস্টেম আছে। চাকুরিচ্যুত করার ক্ষমতা সরকারেরও নেই।
প্রধান শিক্ষক খাদিজা সুলতানা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষক আলেয়া ছালমা নিয়মমাফিক ছুটিতে আছেন।