ঢাক বিমানবন্দরে বিড়ম্বনা ও চুরির শিকার শাহেন শা বেগম
মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন: ৪ অক্টোবর (নিউইয়র্ক) : ঢাকার শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিড়ম্বনা, হয়রানি ও চুরির শিকার হন আমেরিকরা প্রবাসী শাহেন শা বেগম । ৭৫ বছর বয়সী হাঁটতে অক্ষম অসুস্থ শাহেন শা বেগম তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় জানতে চান প্রবাসী বাংলাদেশীরা কী স্বদেশেও বিদেশী।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি নিউইয়র্ক থেকে বিমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ।
তিনি জানান, বিমানবন্দেরে নিয়োজিত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তার আমেরিকান পাসপোর্টে ‘নো ভিসা রিক্রয়াার্ড টু ট্রাভেল টু বাংলাদেশ ’ লেখা সংবলিত সীল দেখেও আমার ভিসা নেই, এই অজুহাতে আমাকে বিমানবন্দর বের হতে দেন নি। কর্মকর্তারা তাকে ভিসা নিয়েই বাংলাদেশে ঢুকতে হবে বলে জানান। এমন শর্ত তাকে হতবাক করে। যদিও তিনি একই পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। তিনি স্বদেশেই অসহায়ত্ববোধ করেন। তার সাথে দেশে গিয়েছেন এমন সবাই তাদের গন্তব্যে চলে যান। অথচ তিনি আটকা পড়েন।
তিনি বলেন, জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে ভিসা নিতে হয়। ভিসা নেয়ার জন্য হুইলচেয়ার বসে তাকে এককক্ষ থেকে আরেক কক্ষে, এক টেবল থেকে অন্য টেবিলে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুরতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৫০ ডলার দিয়ে ব্যাংকে জমা দিয়ে মাত্র ৩০ দিনের ভিসা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, “আমার বিড়ম্বনা এখানেই শেষ হয় নি। আমি বুঝতেই পারি নি, আমার জন্য আরো বিরাট বিপদ ও বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।”
তিনি জানান, ভিসা নিয়ে তিনি তার দুটি ল্যাগজ যথাস্থানে না পেয়ে আলোবিহীন ল্যাগেজ খুঁজতে গিয়ে দুটি ল্যাগেজ দুই জায়গায় পড়ে থাকতে দেখেন। তবে দুটি ল্যাগেজরই তালা ভাঙ্গা ছিল। ভিতরে কিছুই নেই। একেকটিতে ৫০০ চকোলেট রয়েছে এমন চারটি প্যাকেটের একটিও তিনি পান নি। বিভিন্ন ধরনের কুকি (বিস্কিট), শ্যাম্পু, সাবান, সুগন্ধি, মেকআপসহ নানা রকমের প্রসাধনীর কিছুই পাওয়া যায় নি। তার নিজের ঔষধের সবগুলো প্যাকেটও খোয়া গেছে। ডলারগুলো হারিয়েছেন ।
তিনি তার ভিসা নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা এবং ল্যাগেজের সবকিছু খোয়া যাওয়াকে একটি পাতানো খেলা বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “আশ্চর্ষের বিষয় হলো একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ব্যাজেও তাদের নাম নাম লেখা ছিলনা।”
দুর্দান্ত দুঃসাহসী ও স্পষ্টভাষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া শাহেন শা বেগম নিউইয়র্কের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে, বিশেষত শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায় এবং মানবাধিকর আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে আন্তর্জাতিকমহলে সমাদৃত। নিউইয়র্কের বেসরকারী বিদ্যালয়ের যোগ্য শিক্ষক শাহেন শা চাইনিজ ওয়ার্কার এ্যাসোসিয়েশন, সিটি ওয়াইড এ্যালাইন্স, ন্যাশন্যাল মোভিলাইজেশন এ্যাগেন্যাস্ট সয়েটশপ’ (ঘগঅঝঝ), ফ্ল্যাশিং ওয়ার্কাস সেন্টারসহ অনেকগুলো বিশ্ববিখ্যাত শ্রমজীবী সংগঠনের এডভাইজার (সংগঠক) ও এডভাইজার (উপদেষ্টা)।
নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশেীদের অনেকেই একই ধরনের সমস্যা পড়েছিলেন। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা এই ধরনের আচরণ করতে পারে না । এরা আদৌ ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কী না তা নিয়ে সন্দেহ তথা প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক । ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার পোশাকপরা ব্যক্তিরা হয়তো অন্যকেউ হতে পারেন।
বিমনবন্দর কর্তৃপক্ষের বিষয়টির প্রতি নজর দেয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগেও আরো অনেকেই এমন হয়রানি ও সর্বস্ব হারানোর শিকার হয়েছিলেন। দুর্ভাগবশত পরিস্থিতি মোটেই বদলায় নি।
আমেরিকা প্রবাসী অনেকেই মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা দেশ ও জাতির জন্য চরম লজ্জার বিষয়, যা বিদেশী পর্যটক ও বিনিয়োগকারীদেরকে বাংলাদেশে যাতায়াতে নিরুৎসাহিত বঞ্চিত করছে।
প্রবাসীদের অভিমত তারা বিদেশ থেকে স্বদেশে টাকা পাঠান। তাদের দাবি সব প্রবাসীদেরকে স্বদেশে প্রবেশে ভিসামুক্ত করা জরুরী। প্রবাসীরা অন্তত এমন সুযোগের দাবিদার। বিমানবন্দর থেকে সব ধরনের অপরাধ বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
উল্লেখ্য, আমেরিকান নাগরিকরা বিশ্বের ১৮৫টি রাষ্ট্র ও অঞ্চলে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন। তবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ সাম্ন্যা ক’টি দেশে আমেরিকানদেরকে ভিসা নিতে হয়।
তাদের পরামর্শ, যেসব বাংলাদেশী বিভিন্ন দেশের নাগরিক তাদের বাংলাদেশে প্রবেশ ভিসামুক্ত করতে জরুরী উদ্যোগ নেয়া উচিত।*
****