হাসিনাবিহীন নির্বাচনেও হাসিনাই ক্ষমতায় আসবেন, যদি না …….
মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন: অনির্বাচিত এবং ক্ষমতায় জেঁকে বসা প্রধানমন্ত্রী আমেরিকাসহ গণতান্ত্রিক দুনিয়ার প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য সম্ভাব্য অবাধ, এমনকি তত্ত¡াবদায়ক বা জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও শেখ হাসিনা এবং ভারতের পছন্দই কেউ ক্ষমতা বসবেন, যদি না ভারতের চক্ সাজানো চলমান ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করা না হয়। তিন মাস কিংবা ছয়মাস বয়সী তত্ত¡াবদায়ক বা জাতীয় সরকারের পক্ষে ‘হাসিনা হঠাও’ নির্বাচন বরং শেখ হাসিনাকে আরো শক্তিশালী করে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনবে।
২০০৯ সনের অবাধ নির্বাচনের নামে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার সাজানো নির্বাচনের পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সবক্ষেত্রে ইতোমধ্যে যে জঘন্য পরিবর্তন আনা হয়েছে, এবং আগামী এক বছরেরও বেশি সময়ে হবে, সেগুলোকে অব্যাহত রেখে কোন নির্বাচনেই বিরোধীদল বিজয়ী হবে না।
গ্রাম তথা ওয়ার্ড প্রশাসন থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের সব স্তরেই আওয়ামীপন্থীর আবরণে ভারতপন্থীরা বসে আছেন। গ্রামীণ চৌকিদার থেকে শুরু করে পুলিশের আইজি, ইউনিয়নের বোর্ডের কেরাণী থেকে চীপ সেেেক্রটারী পর্যন্ত যারা মুখে দেশপ্রেমিক বাস্তবে ভারতপ্রেমিক-টাকাপ্রেমিকরা বসে আছেন তাদের সবাই আওয়ামী দুঃশাসনের সুবিধাভোগী। এদের ৯০ ভাগ আওয়ামী লীগকে হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে মরিয়া।
বিরোধী দলগুলোর দাবি মেনে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সবাইকে সরিয়ে দিয়ে, এমনকি ইবিএম নামক ভোট চুরির যন্ত্র (বাংলাদেশের ক্ষেত্রে) বাদ দিয়ে পুরানো কায়দায় ব্যালটে ভোট নেয়ার ব্যবস্থা করলেও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। কারণ টিএনও, ডিসি, এসপি, পুরো নির্বাচন কমিশনে নতুন কাউকে বসালেও নির্বাচন স্বচ্ছ হবে না। এদের জায়গায় নত্নু যারা বসবেন, তাদের সবাই তো একই গুরুর শিষ্য, অর্থাৎ রাজপথ কাঁপানো আওয়ামী লড়াকু সৈনিক।
আর মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক, (নতুন করে চালু হওয়া) ঝাড়–দার, পিয়ন পর্যন্ত আওয়ামী পরিচয়েই চাকরি করেন। এরাই মূল নির্বাচনের সাথে যুক্ত। এদের সাথে থাকবেন আওয়ামী লাঠিয়াল বাহিনী, যারা বাইরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মুজিব লীগ, হাসিনা লীগ, রাসেল লীগ, পুলিশ লীগসহ হাজারো নামের প্রশিক্ষিত বাহিনী, যারা ভোট চুরির জন্য মজুদ আছে।
সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় নিয়ে কোন রাজনীতিক-বুদ্ধিজীবীরা এই বিষয়ে একেবারেই নীরব। তারা কী বিষয়টি জানেন না বা বুঝতে পারেন না। ভারত থেকে আমদানী যে অজানা সংখ্যক হিন্দুকে বাংলাদেশে বসানো হয়েছে তাদেরকে বাংলাদেশে রেখে যেভাবেই নির্বাচন করা হোক তাতে শেখ হাসিনা তথা ভারতই বিজয়ী হবে।
ফ্লোরিডা (আমেরিকা) প্রবাসী জনৈক বাংলাদেশী ইতোমধ্যেই তার ফেসবুকে অভিযোগ করেছেন ভারত থেকে চারকোটি হিন্দুকে বাংলাদেশে ঢুকানো হয়েছে। এদেরকে বাংলাদেশে জন্মনিবন্ধন পত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র তথা ভোটার আইডি, পাসপোর্ট বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে দেখানো হয়েছে (এমন দুষ্কর্মে হিন্দুত্ববাদী গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশী ঘুষঘোর ও ভারতীয় চরদের মাধ্যমে করিয়েছে)। ইতোমধ্যে সচিবালয়সহ দেশের সরকারী-বেসরকারী, যত্রতত্র হিন্দুদের আধিক্য এবং সরকারী প্রণোদনা ও প্রাধান্য ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এদেরকে বাংলাদেশে রেখে কোন নির্বাচন ভারতের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হবে তেমন আশা দুরাশা মাত্র।
মনে রাখতে হবে পরবর্তী নির্বাচনে ভারতপন্থীদের বিজয় মানে বাংলাদেশকে চিরতরে ভারতে হাতে তুলে দেয়ার গণভোট বিশেষ। এই নির্বাচনে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীরা ক্ষমতায় না আসলে এই দেশ ভারতের অধীনস্থ’ সিকিম, এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ভারতভুক্ত হবে, যাকে ভারত খন্ড-বিখন্ড করে বাংলাদেশ নামক দেশটি চিরতরে বিলীন করে দেবে । আর ১৮ কোটি মুসলমানের দেশ ইতোমধ্যে সিরাজুল আলম খান-এরশাদ গং ঘোষিত নয়টি প্রদেশে ভাগ করে মুসলমানদেরকে সংখ্যালগু করা হবে। এমন জঘন্য মুসলিম নিধন চালানো হবে, যা বিশ্ববাসী কখনোই দেখে নি, এমনকি কাশ্মীর-আরাকানেও নয়।
সুতরাং ভারতের প্রভাবিত এবং ভারতীয়দের উপস্থিতিতে এদেশে নির্বাচন করোরই কাম্য হওয়া উচিত নয়। কেবল হাসিনামুক্ত সরকারই নয়, বাংলাদেশ ভারতের খবরদারি তথা প্রভাব ও ছায়ামুক্ত নির্বাচনই বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারে। তা না হলে এই নির্বাচনই হবে বাংলাদেশের জন্য শেষ নির্বাচন।
এমন জঘন্য মন্তব্য করার পেছনে নিচের মন্তব্যটিই দায়ী, যা আমাকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায়। ২০০৯ সনে সম্পূর্ন বাইরের শক্তিসমূহের সমন্বয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার নির্বাচনের মাসখানেক পরে এক সেমিনারে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান শংকর রায় চৌধুরী বলেছিলেন: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ ভারতের হাতে আসে আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ পাকিস্তানের হাতে চলে যায়। এবার (২০০৯ সনে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর) বাংলাদেশকে আর কখনোই ভারতের খপ্পরের বাইরে যেতে দেয়া হবে না।
শংকরের এই বক্তব্য তার নিজের নয়। এটা ভারত সরকারের সতসিদ্ধ নীতি। গত ১৪ বছর ধরে শেখ হাসিনা শংকরের তথা ভারতের সেই নীতিই বাস্তবায়ন করে চলেছেন। শেখ হাসিনার মনে কথা হাসিনা নেই তো বাংলাদেশ নেই। (ভারতের স্বপ্ন রুখতে হবে। লেখার জন্য অপেক্ষা করুন।)
*মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন,
সাংবাদিক ও গবেষক, নিউইয়র্ক
২০ অক্টোবর, ২০২২