মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল: পিনু – আশ্রাফ দ্বন্দ্বের নেপথ্য কারণ (একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট)
সাবেক পটুয়াখালী পৌর মেয়র মোস্তাক আহাম্মেদ পিনুর আগ্রাসী ভূমিকা ও ষড়যন্ত্রে মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে আশ্রাফ আলী হাওলাদারকে বাদ দেয়া হয়েছে, পিনুর এমন ষড়যন্ত্রে বিব্রত পটুয়াখালী জেলা বিএনপির অনেক নেতা!
গত ২১শে অক্টবর ২০২২, মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই কাউন্সিলে উপস্থিত কাউন্সিলরদের ভীতি প্রদর্শন ও প্রাপ্ত ভোটের ফলাফলকে পরিবর্তন করে সভাপতি হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে সাহাবুদ্দিন মুন্সি নান্নু ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে জাহাঙ্গীর ফরাজীকে।
বিজয়ী সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক নিয়ে বর্তমান আহ্বায়ক আশ্রাফ আলী হাওলাদারের কোন আপত্তি না থাকলেও সকল ষড়যন্ত্রের মুলে থাকা একজন জেলা বিএনপির নেতাকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে ব্যাপক বিতর্ক- জেলা বিএনপির আহ্য়বায়ক কিংবা সদস্য সচিব না হয়েও সাবেক পৌর মেয়র মোস্তাক আহাম্মেদ পিনু সেই কাউন্সিলে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেছেন এবং মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আশ্রাফ আলী হাওলাদারকে প্রাপ্ত ভোটের ফলাফল না জানিয়ে বরং গায়ের জোরে প্রাপ্ত ভোট বাদ দিয়ে ওপর প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। সেদিনের কাউন্সিল অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা বিএনপির নেতারা এই বিষয়ে বিব্রতবোধ করছেন বলে জানা যায়।
প্রায় দেড় বছর আগে মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মনোনীত হয়েছিলেন আশ্রাফ আলী হাওলাদার। তিনি দায়িত্ব পেয়েই উপজেলার সকল ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন কিন্তু পটুয়াখালী জেলার সাবেক মেয়র মোস্তাক আহাম্মেদ পিনু মির্জাগঞ্জের প্রতিটা ইউনিয়নে তার নিজস্ব লোক নিয়োগের ব্যাপারে নগ্ন হস্তক্ষেপ করা শুরু করেন।
প্রাথমিকভাবে এ বিষয় নিয়ে মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আশ্রাফ আলী হাওলাদারের সাথে পিনুর মনোমালিন্য শুরু হয়। কোন ইউনিয়নে পিনুর নিজস্ব লোক ছাড়া কমিটি করতে দিচ্ছিলেননা পিনু। জেলা বিএনপির আহবায়ক কিংবা সদস্য সচিব না হয়েও নিজেকে অনেকটা জেলা বিএনপির মালিক দাবি করে তার দেয়া লোকের নামে কমিটি পাশে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন।
কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে পিনুর হুমকি ছিল “আমি বিএনপি চিনিনা জেলার সকল উপজেলায় এবং ইউনিয়নে আমি আমার লোক চাই।”
মোস্তাক আহাম্মেদ পিনুর কিছু দাবি মেনে হলেও ৫টি ইউনিয়নের বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেন আশ্রাফ আলী হাওলাদার কিন্তু ২নং মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপি নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক হট্রোগোল।
মোস্তাক আহাম্মেদ পিনু তার নিজস্ব লোক ইসমাইল হোসেন সাব্বির নামে একজনকে মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বানাতে চাইলে আশরাফ আলী হাওলাদার সেটা মানতে রাজি হননি কেননা এই সাব্বির ফুল টাইম ঢাকাতে বসবাস করেন, এলাকায় তেমন আসেননা। বিশেষ করে পদ্মা সেতু থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে টুপুস করে ফেলে দেয়া আওয়ামীলীগের বানানো একটি কার্টুন তার নিজস্ব ফেইজবুক আইডিতে শেয়ার করেন। এতে করে মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় সকল বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এমনকি উপজেলা বিএনপির কাছে সাব্বিরের বহিষ্কারের দাবি জানান।
এমতাবস্থায় সাব্বিরকে মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বানানো কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে পিনুকে সাফ জানিয়ে দেন আশ্রাফ আলী হাওলাদার। এতে করে পিনু ক্ষিপ্ত হয়ে আশ্রাফ কিভাবে রাজনীতি করে সেটা তিনি দেখে নেবেন প্রকাশ্যে এমন হুমকি দিতে থাকেন। অবশেষে ২১সে অক্টবর মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে নিজ দায়িত্বে কাউন্সিলরদের হুমকি ধামকি দিয়ে এমনকি প্রাপ্র্য ভোটের ব্যালট পেপার নষ্ট করে দিয়ে আশ্রাফ আলী হাওলাদারকে অবৈধভাবে পদচ্যুত করেন।
পিনুর এমন আগ্রাসী ভূমিকা দেখে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু ও সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে পরেন। এমনকি সম্মেলনে আগত সকল অতিথিরা বিব্রত বোধ করতে থাকেন। দলের এই ক্রান্তিকালে বিষয়টা যেন আওয়ামীলীগের হাসির খোরাক না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কোনোভাবে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করে মনোক্ষুন্ন হয়ে পটুয়াখালী ফিরে আসেন জেলা বিএনপির সকল নেতাকর্মীরা।
এদিকে ষড়যন্ত্রের শিকার আশ্রাফ আলী হাওলাদার দলের যেন দুর্নাম না হয় সেজন্য সম্মেলনস্থলে বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পরেরদিন ফেইজবুকে আবেগাপ্লুত একটি স্ট্যাটাস দিলে সকলের মাঝে ষড়যন্ত্রের পুরা ঘটনাটি আগুনের ফুলকির মতো ছড়িয়ে পরে। বিএনপি নেতাকর্মী সহ পটুয়াখালী জেলার সকল মানুষ পিনুর নামে ছিঃ ছিঃ করতে শুরু করেন। পিনুর এমন ন্যাক্কার জনক ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসী ভূমিকার জন্য দলের হাইকমান্ডে অভিযোগপত্র দাখিলের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সবাইকে মনে রাখতে হবে “ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে দেশ”
আসুন এবারে জেনে নেই কে এই মোস্তাক আহাম্মেদ পিনু:
আশির দশকে জাতীয়পার্টির ছত্রছায়ায় থাকা পটুয়াখালী জেলার হোন্ডা বাহিনী নামে খ্যাত মোস্তাক আহাম্মেদ পিনু একজন ঠিকাদার হিসাবে পরিচিত। ১৯৯১ সালে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে হামলা মামলার ভয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী এম কেরামত আলী এমপির শেষভাগে পিনু আবার পটুয়াখালীতে ফিরে আসেন। পরে ১৯৯৬সাল থেকে আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় নিজেকে আবার সঙ্গবদ্ধ করে গড়ে তোলেন।
২০০১ সালে সাবেক এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী এমপি ও পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচিত হলে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মোড় নেয়।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন মৃধার সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর দা- কুমড়ার সম্পর্ক তৈরী হলে মোস্তাক আহাম্মেদ পিনুকে সামনে নিয়ে আসেন জনাব আলতাফ হোসেন চৌধুরী। ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্বহীন মোস্তাক আহাম্মেদ পিনুকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আঙুলের ইশারায় পৌরমেয়র নির্বাচিত করা হয়। সেই থেকে মোস্তাক আহাম্মেদ পিনুকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অনেক কামাইবাদা হয়েছে কিন্তু ১/১১ সরকার ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির দায়ে জেলে প্রেরণ করেন মোস্তাক আহাম্মেদ পিনুকে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেহেতু তৎকালীন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তাই কিছুদিনের মধ্যে শুরু হয় গ্রূপিং। পিনু গ্রূপ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী গ্রূপকে কোনঠাসা করা শুরু করেন। এমনকি কথিত আছে আলতাফ হোসেন চৌধুরীর পটুয়াখালীর বাসায় আওয়ামীলীগের দুই দুইবার হামলা ভাঙচুরের পিছনে পিনুর ইন্দন থাকতে পারে বলে অনেকে ধারণা করেন।
এদিকে গত দুই বছর আগে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আব্দুর রশিদ চুন্নুকে আহবায়ক এবং স্নেহাংশু সরকার কুট্টিকে সদস্য সচিব করে জেলার সকল উপজেলা বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর দায়িত্ব দেয়া হয়। মোস্তাক আহাম্মেদ পিনু জেলা বিএনপির এই সকল নেতাদের মাথায় লবন রেখে সকল স্তরে নিজস্ব লোক বসানোর চেষ্টায় লিপ্ত আছেন। তার কথা হলো আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপির লোক সেটা দেখার বিষয়না না “পিনু”র লোক হলে বিএনপির পদ দিতে হবে নইলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। মোস্তাক আহাম্মেদ পিনু যেন এখন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির একমাত্র মালিক হয়ে দাঁড়িয়েছন।
এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বিএনপি হাই কমান্ডের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে পটুয়াখালী জেলাবাসী মনে করেন। যদিও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে দেখা করারও সুযোগ পাননা মোস্তাক আহাম্মেদ পিনু তবে দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা বিএনপি দফতর সম্পাদক জনাব রিজভী আহাম্মেদের সাথে কিছুটা সখ্যতা রয়েছে তার। আর তাই রিজভী আহাম্মেদের নাম ব্যবহার করেই পিনু চালিয়ে যাচ্ছেন সকল অপকর্ম, এমনটাই শোনা যাচ্ছে।