সরকারি বাধা উপেক্ষা করে একদিন আগেই ফরিদপুরের হাজারো মানুষ
অন্যান্য বিভাগীয় শহরের গণসমাবেশের মতই ফরিদপুরেও সরকারি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আন্তঃজেলা গণপরিবহন।
তবে কোন বাধাই গণসমাবেশে মানুষের উপস্থিতি ঠেকাতে পারছে না ফ্যাসিবাদী সরকার। ইতোমধ্যে ফরিদপুরের সমাবেশস্থলে আরো দুইদিন আগে থেকেই মানুষ জড়ো হতে শুরু করেছে। শনিবার সমাবেশের নির্ধারিত তারিখ। অথচ, বৃহস্পতিবারেই হাজারো মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে সমাবেশস্থলে। সমাবেশস্থলে মানুষে খাবার সরবরাহের জন্য ডেকচিতে রান্নার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে ইতোমধ্যে। তারপরও ফ্যাসিবাদি সরকার আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ করে মানুষের উপস্থিতি ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এদিকে শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পিরোজপুর থেকে ঢাকা রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে না। এতে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার সঙ্গেও রাজধানীর বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোট চারদিন বরিশালে দূরপাল্লা রুটের বাস চলাচল বন্ধ হলো।
ঢাকা রুটে বাস বন্ধের পূর্ব ঘোষণা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। ঢাকামুখী যাত্রীদের বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধের সত্যতা নিশ্চিত করে বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম মাশরেক বাবলু গণমাধ্যমকে জানান, বৃহত্তর ফরিদপুরের বাস মালিক-শ্রমিকরা শুক্র ও শনিবার ৩৮ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করেছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকা রুটের বাসগুলো ফরিদপুরের ভাঙ্গা মোড় অতিক্রম করতে হয়। পরিবহন ধর্মঘট থাকায় ওই জেলার সড়কপথে বাস চলাচল করতে দেবেন না ফরিদপুরের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। তাই দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলা থেকে রাজধানীর যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
বরিশাল-ঢাকা রুটের ইলিশ পরিবহনের চালক মো. ফিরোজ জানান, রাজধানীর সঙ্গে বাস চলাচল শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকবে।
শনিবার ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরেও বাসসহ সব ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন শুক্র ও শনিবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
যদিও বাস মালিক গ্রুপের দাবি, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের দাবিতে বৃহত্তর ফরিদপুরের সব রুটে ৩৮ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার সকাল থেকে রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরসহ অন্য সব রুটেই বাস চলাচল বন্ধ আছে।
এদিকে বাস ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ছোট ছোট যানে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। এ জন্য অন্যান্য দিনের তুলনায় অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
রাজবাড়ী শহরের নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ড ও বড়পুল এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে রাজবাড়ী থেকে কোনো রুটেই বাস ছাড়েনি। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী বাসগুলো সাধারণত রাজবাড়ীর ওপর দিয়ে যায়। তবে আজ কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা কোনো বাস রাজবাড়ীর ওপর দিয়ে যেতে দেখা যায়নি।
নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাস না থাকলেও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজনে যারা বাড়ি থেকে বের হয়েছেন, তাঁরা অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে যাতায়াত করছেন। আবার অনেকেই বাস ধর্মঘটের বিষয়ে না জেনেই বাড়ি থেকে বের হয়ে বিপাকে পড়েছেন।
বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইজিবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফরিদপুরের চালক ফরহাদ হোসেন। ফরিদপুর থেকে যাত্রী নিয়ে তিনি রাজবাড়ী এসেছিলেন। সরাসরি মহাসড়কে না এসে বিকল্প পথে এসেছেন। এ কারণে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। এখন আবার ফরিদপুরের যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।
ধর্মঘটের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ী বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হাসান মৃধা বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ওই দাবি না মানায় বৃহত্তর ফরিদপুরের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত রাজবাড়ী থেকে নেওয়া হয়নি। দক্ষিণবঙ্গের বাস মালিকদের সংগঠন থেকে নেওয়া হয়েছে।
জেলা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নাসির বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিভাগীয় কমিশনার বরাবর গত সোমবার চিঠি দিয়ে আমাদের দাবি মেনে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তবে সেই দাবি মানা হয়নি। ফলে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ১২ নভেম্বর শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা বাস টার্মিনাল থেকে আঞ্চলিক বাস ও মিনিবাসসহ দূরপাল্লার পরিবহনের সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, সমাবেশে নেতাকর্মীদের জনস্রোত ঠেকাতে সরকারের ইন্ধনে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে কতিপয় মালিক শ্রমিক নেতারা।
উল্লেখ্য, শনিবার ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরে বাসসহ সব ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন শুক্র ও শনিবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত শনিবার (৫ নভেম্বর) বরিশালের বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে দুইদিন একইভাবে বরিশালে বাসসহ সব ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে লাখো জনতার উপস্থিতি ঠেকাতে পারেনি সরকার। বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহে সমাবেশ হয়েছে সরকারি বাঁধা উপেক্ষা করে। সব গুলো সমাবেশে লোক সমাগম ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে থাকবে।