ছাত্রদল নিয়ন্ত্রণে তৎপর ‘বিশেষ সিন্ডিকেট’
পিবিসি নিউজ ডেস্কঃ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নিয়ন্ত্রণ নিতে ফের তৎপর হয়েছে একটি ‘বিশেষ সিন্ডিকেট’। এতে বিএনপিতে থাকা সাবেক কিছু ছাত্রনেতাও রয়েছেন।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিতে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এই সিন্ডিকেট। বেনামে বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন তারা। সম্প্রতি রাজধানীতে এসব নেতা দুটি বৈঠকও করেছেন। উভয় বৈঠকেই এমন কিছু বিএনপি ও পেশাজীবী নেতাও উপস্থিত ছিলেন।
যাদের বিরুদ্ধে অতীতে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল। নতুন করে এই গ্রুপটি ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে বলে ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করতে কয়েকজন বিএনপি নেতাকে দায়িত্বও দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
বর্তমান কমিটি ভেঙে নিজেদের লোক দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনতে চায় একটি গ্রুপ।ছাত্রদলের বিভিন্ন বিষয় দেখভাল করে আসছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দেশের সবচেয়ে বড় সংগঠন। তাদের নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা হবেই। ছাত্ররাজনীতি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা হওয়াটা তো স্বাভাবিক। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি হয়েছে কেবল ছয় মাস আগে। এই কমিটি তার কার্যক্রম সুন্দরভাবেই করছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তারা রাজপথেও আছে। বড় একটি সংগঠন হিসাবে ছাত্রদলের নিজেদের মধ্যে আন্দোলনের কৌশল বা রূপরেখা নিয়ে সমস্যা থাকতে পারে। তবে, কমিটি ভাঙার খবর-এটি একটি অপপ্রচার।
’‘বিশেষ সিন্ডিকেট’ ভেঙে গত বছরের ১৭ এপ্রিল কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি এবং সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে সুপার ফাইভ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর দেওয়া হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এই কমিটি দেওয়া থেকেই শুরু হয় বিএনপির সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি অংশের তৎপরতা।
ঘোষিত কমিটির ৭০-৭৫ জন নেতার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে নানা অভিযোগ দেওয়া হয়। এই অভিযোগের তদন্ত ছাড়াই ৩২ জনের পদ স্থগিত করা হয়।ছাত্রদলের পদ স্থগিত হওয়া একাধিক নেতা বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমরা দলের কাছে প্রকৃত সত্য তুলে ধরেছি। যতদূর জানি, আমাদের বক্তব্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সন্তুষ্ট হয়েছেন। পদ স্থগিত থাকলেও চলমান আন্দোলনে তো আমরা আছি।’
বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে ‘বড় ধরনের’ বিদ্রোহ তৈরির চেষ্টা টের পেয়ে শুরুতেই তা থামিয়ে দিতে ৩২ নেতার পদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত দেন। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতরা গত কয়েক মাস ‘চুপচাপ’ থাকলেও ফের সক্রিয় হয়েছেন। বরং এর সঙ্গে নতুন করে কিছু বিএনপি নেতাও যোগ হয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি, রাজধানীর নয়াপল্টনের এক নেতার ব্যক্তিগত অফিসে ও গুলশানে একটি রেস্তোরাঁয় এসব নেতা বৈঠক করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরে কমিটি ভাঙার প্রথম মিশন ব্যর্থ হলে তারা দ্বিতীয় মিশন নিয়ে নামে। এই নিয়েই উভয় বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল-এই তিন সংগঠনকে টার্গেট করা হয়। প্রথম টার্গেট হিসাবে বেছে নেওয়া হয় ছাত্রদলকে। এ মিশন সফল হলে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়ে এই অংশটি মাঠে নামবে।
সূত্র আরও জানায়, গত বছরের জানুয়ারিতে উত্তরায় একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে বিএনপি, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদলের বেশ কিছু নেতা অংশ নেন। ওই বৈঠকে অংশ নেওয়ার অভিযোগে অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের পরবর্তী নতুন কমিটিতে স্থান হয়নি।এ অবস্থায় ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সভাপতি শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েলের বিরুদ্ধে বেনামে কিছু অভিযোগ তোলা হয়।
সম্প্রতি একযোগে বিএনপি নেতাসহ সাংবাদিকদের মেইলেও তা পাঠানো হয়। তাতে অভিযোগ করা হয়, যোগ্যদের বাদ দিয়ে বর্তমান কমিটির দুই শীর্ষ নেতা নিজ বলয়ের নেতাদের দিয়ে বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠন করেছে। তবে, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির একজন সহসভাপতি বলেন, ‘কোনো কমিটির শীর্ষ পদে কাউকে আনতে গেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন নিতে হয়।
এ ছাড়াও স্থানীয় বিএনপির সুপারিশ থাকতে হয়। অতএব এককভাবে কমিটি করার সুযোগ শ্রাবণ বা জুয়েলের পক্ষে সম্ভব নয়।’ মেইলে ও বেনামে পাঠানো অভিযোগ নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ডও বিব্রত।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রায় একই সুরে বলেন, ‘ছাত্রদল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় সংগঠন। এই সংগঠনের প্রতিটি ইউনিটের শীর্ষ পদের বিপরীতে একাধিক যোগ্য ও মেধাবী পদপ্রত্যাশী থাকেন। এদের মধ্যে একজন সভাপতি ও একজন সাধারণ সম্পাদক করা সম্ভব হয়। বাকিদের মধ্যে সাময়িক কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও থাকতে পারে। তবে, প্রকৃত ছাত্রদলের সৈনিক যারা, তারা কেউ সংগঠনের ক্ষতি হোক তা চান না। আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে ছাত্রদল যেকোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ।’