দারিদ্র্যের চাপে ফুটপাতে শুয়ে থাকা মানুষ বেড়েছে: হোসেন জিল্লুর
পিবিসি নিউজ ডেস্কঃ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে যাদের আর্থিক দুর্বলতা আছে তাদের দুর্দশা বেড়েছে।
বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে লেখা বই ‘ব্যাংকিং অ্যালমানাক’-এর চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ব্যাংকিং অ্যালমানাক বইটিতে ২০২০ ও ২০২১ সালের সব তথ্য রয়েছে।শনিবার (৭ই জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এই অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথির বক্তব্য দেন তিনি।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থনীতির আলোচনায় আমি নিজে মনে করি যে আগামীতে একটি বিশেষণ ব্যবহার করা উচিত। খুব সহজ বিশেষণ রিয়েল ইকোনোমি। রিয়েল শব্দটা সংযোজন করা খুব দরকার। অর্থনীতি নিয়ে একেক জন একেক রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। আমি ব্যাংকিং খাতের কথা বলি, দারিদ্র্যের কথা বলি। এই রিয়েল কথাটা বলা এখন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। এই রিয়েল ইকোনোমির আলোচনাটা বাংলাদেশে খুব জোরালোভাবে হওয়া উচিত। এটা অর্থনীতিবিদদের একটি বাড়তি দায়িত্ব।
তিনি বলেন, আরেকটি সমস্যা আমরা দেখতে পাচ্ছি, আংশিক ব্যাখ্যা বা বিবরণ। কোনো বিষয়ে আংশিক দৃষ্টিপাত করে সেখান থেকে আমরা পুরো ছবি পাব না। চট্টগ্রাম থেকে গাড়ি চালিয়ে আসার পথে দেখলাম ফুটপাতে শুয়ে আছে অনেক মানুষ। এই শীতের মধ্যেও ফুটপাতে শুয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ফুটপাতে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে যে আয়ের দিক থেকে দুর্বল মানুষগুলোর দুর্দশা বেড়েছে। এর একটি কারণ অবশ্যই অর্থনৈতিক চাপ। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে। করোনার ধাক্কাও আছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার মতো তথ্য হচ্ছে এটা।
ড. হোসেন জিল্লুর বলেন, বাংলাদেশে তথ্য দ্বিধা ও তথ্য বিভ্রাট দুটোই বাস্তবতা। সার্বিকভাবে বাংলাদেশে আমরা একটি বিভ্রাটের সমস্যার মধ্যে আছি। এর মধ্যে ব্যাংকিং অ্যালমানাক খুব ভাল উদ্যোগ। এখানে কোনো মনগড়া তথ্য নেই।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধাক্কা বাংলাদেশেও লেগেছে। বড় বড় অর্থনীতি সংকটের মধ্যে পড়েছে। তুলনামূলক ছোট অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমরা বৈশ্বিক বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে টিকে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি আমরা বড় ধরনের ক্ষতি ছাড়াই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)-এর সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, ব্যাংকিং অ্যালমানাক একটি মূল্যবান বই। ২০১৬ সাল থেকে এটা বের হচ্ছে। এটা ছাত্র ও গবেষকদের অনেক কাজে লাগবে। এখানে কোনো ভুল তথ্য নেই।
বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ)-এর সাবেক সভাপতি মো. খলিলুর রহমান বলেন, বইটিতে বাংলাদেশের সব ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঠিক তথ্যগুলো আছে। বলা হচ্ছে যে দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থার সমস্যা আছে। সেটা আসলে নেই। কিছু ব্যাংকে সমস্যা আছে, সবগুলোতে নেই। এই বই পড়লে বোঝা যাবে কোনগুলোতে সমস্যা আছে আর কোনগুলোতে নেই।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া দরকার। দেখছি, দেখব, আশা করি ভাল হয়ে যাবে- এ ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্যের দরকার নেই। যেকোনো বিষয়ে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে কাজ করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে টাকার সরবরাহ বাড়াতে হবে। আবার টাকার সরবরাহ বাড়ালে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। অন্যদিকে টাকার সরবরাহ কমালে ছোট ব্যবসা বিপদে পড়বে। এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এই সমস্যার সমাধান করতে হলে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আর তা করতে হলে স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে। আমাদের এখানে বিশেষ ক্ষমতাবলে অনেক কিছু হয়। কিন্তু সব হওয়া দরকার আইনের মধ্যে। এছাড়া আমাদের সুশাসন বাড়াতে হবে।