শিক্ষায় হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার হোতা দীপু মনি
পিবিসি নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন আওয়ামী শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি। ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে যখন তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন থেকেই বাংলাদেশে ভারতীয় সংস্কৃতির আধিপত্য বিস্তারের প্রথম প্রক্রিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় শিক্ষামন্ত্রী হবার হবার পর শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রাধান্য দেওয়ার কাজ শুরু করেন তিনি।
বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার জন্য পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন দীপু মনি।সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার মধ্যেও হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা সংযোজন করে ইসলামী ও মাদরাসা শিক্ষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নষ্টের গভীর ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।
এসএসসির মত গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা ২০২২ এ করোনার অজুহাত দেখিয়ে “ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা” এরই মধ্যে পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালেও ইসলামী শিক্ষা সিলেবাস থাকবে কিন্তু পরীক্ষা হবে না। বিজ্ঞানমনস্ক বানানোর নামে ৯ম-১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে বিতর্কিত ‘ডারউইন তত্ত্ব’ বহাল করা হয়েছে।
অথচ নীতি-নৈতিকতা শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম “ধর্মশিক্ষা” বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র দীপু মনির প্রত্যক্ষ মদদেই শুরু হয়েছে।তার সময়কালে দেশের প্রাথমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাস থেকে বাদ পড়েছে ইসলাম ধর্ম বিষয়ক এবং মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক গল্প-রচনা ও কবিতাসমূহ। তার বদলে যুক্ত হয়েছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের প্রতি উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন গল্প ও কবিতা।
দেশের জনসাধারণের মধ্যে ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত নাগরিক এবং সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমের সিলেবাস থেকে ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম চেতনা-বোধ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের লেখাসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে হিন্দুত্ববাদ বিষয়ক লেখাসমূহ প্রবেশ করানো নিয়ে তৈরি হয়েছে অভিভাবক মহলে চরম উদ্বেগ ও বিতর্ক।
এ নিয়ে সকলের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, স্কুল-কলেজে বর্তমানে যা পড়ানো হচ্ছে, তাতে মুসলমানদের সন্তানরা তাদের জাতীয় ও ধর্মীয় সংস্কৃতি ধরে রাখতে পারবে তো?এরমধ্যে চলতি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে কৌশলে ইসলামের প্রতি অবজ্ঞা এবং সুচতুর ভাবে পীর মাশায়েখদের চরিত্র হননের চেষ্টায় এই উদ্বেগ আরো গভীর হয়েছে।
ইসলাম ও মুসলিম রীতিনীতি, ঐতিহ্য, ইমান ও আমল নিয়ে আজগুবি মিথ্যা গল্পের অজুহাতে ইসলাম ও পীর মাশায়েখদের খারাপ ও জঘন্য হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। অবমাননা করা বিভিন্ন ইসলামী পরিভাষাসহ মুসলিম সংস্কৃতির অংশ দাঁড়ি ও টুপিকে।
শুধু তাই নয়, অতীতে চট্টগ্রাম বোর্ডের প্রশ্নপত্রে রীতিমতো সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে এমনভাবে প্রশ্ন সাজানো হয়েছে যে, যাতে মুসলমানকে সন্ত্রাসী এবং হিন্দুদের মহানুভব হিসেবে চিত্রিত হয়।দেশের ওলামা-মাশায়েখ, ইসলামী চিন্তাবিদ, অভিভাবক-মহল ও শিক্ষাবিদরা মনে করেন, পাবলিক পরীক্ষায় এ ধরনের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। তাদের মতে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িকতা ও নাস্তিকতাবাদ উস্কে দিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি মহল এই কাজ করেছে।
কথায় আছে, “যদি কোনো জাতিকে পদানত করতে চাও, কাবু করতে চাও অথবা কোনো জাতির ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাও, তবে সবার আগে তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে আঘাত হানো এবং সেখানে প্রভাব বিস্তার করো”। গত অর্ধ যুগের ঘটনাপ্রবাহে এই ধারণা জোরালো হয়েছে যে, বাংলাদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেই ইসলামী আদর্শ ও চেতনা-বোধের ওপরই সবচেয়ে বড় আঘাত হানা হয়েছে।
জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই থেকে বেশ কিছু বিষয় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেন, এই যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রাইমারিতে আছে, সেখানে ক্লাস টুতে ‘সবাই মিলে কাজ করি’ শিরোনামে মহানবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল, সেটা বাদ দিয়েছে। ক্লাস থ্রির পাঠ্যবই থেকে ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামে একটা সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল, সেটা বাদ দিয়েছে। চতুর্থ শ্রেণিতে খলিফা হযরত ওমরের সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল, সেটা বাদ দিয়েছে। পঞ্চম শ্রেণিতে নবীজীর বিদায় হজ নিয়ে লেখা, সেটা বাদ দিয়েছে।
ফখরুল ইমাম সংসদ অধিবেশনে নিজের বক্তব্যে আরও বলেছিলেন, পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে ‘বই’ নামক একটা কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেটা ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআন বিরোধী কবিতা। আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ‘লাল গরু’ নামক একটি ছোট গল্প আনা হয়েছে যা মুসলিম শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মতো, তাই গরু জবাই করা ঠিক নয়। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদ।
সপ্তম শ্রেণির বইতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘লালু’ নামক একটি গল্প ঢুকানো হয়েছে। যাতে শেখানো হচ্ছে হিন্দুদের কালীপূজা ও পাঠা বলির কাহিনী। অষ্টম শ্রেণির বইতে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের সংক্ষিপ্ত রূপ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এক ধর্মের বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা ও অন্য ধর্মের বিষয়কে বাদ দেওয়া হয়েছে- এমন প্রসঙ্গ তুলে জাতীয় পার্টির এ সংসদ সদস্য বলেছিলেন, এগুলো কিসের আলামত? আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে চাই, কিন্তু একটা ধর্মের গ্রন্থকে বাদ দিয়ে আরেকটা ধর্মের প্রাধিকার দিয়ে সেখানে আপনি সংস্কৃতি বদলের চেষ্টা করবেন, সেটা কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবশ্যই দেখতে হবে।অবশ্য, অতীতের মতো এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন দীপু মনি।