রুম দখল নিয়ে ছাত্রলীগে রাতভর সংঘর্ষ, আহত ১১
পিবিসি নিউজ ডেস্কঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের রাতভর সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। সোমবার রাতে হলের বর্ধিত ভবনের একটি কক্ষ দখলকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এ ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ফজলুল হক মুসলিম হলের বর্ধিত ভবনের ৫০০৬ নম্বর কক্ষটি ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের দখলে ছিল।
সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান অনুসারীরা রুমটি দখল করতে আসে।এ সময় তানভীর হাসানের অনুসরীরা বাধা দেয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়।
এক পর্যায় সাদ্দাম হোসেন ও শেখ ইনানের অনুসারীরা সৈকতের অনুসারীদের পাঁচটি রুমে তালা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত বারোটা থেকে সকাল পাঁচটা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১১ জন আহত হয়েছেন।
গুরুতর আহতদের মধ্যে ৯ জনই সৈকতের অনুসারী। তারা হলেন-ভূগোল বিভাগের ইমামুল হাসান, ফলিত গণিতের মাহমুদুল হাসান, পারভেজ ও রিদওয়ানুর, মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের কল্লোল ও কাউসার, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শাহেদ প্রমুখ।
এর মধ্যে চারজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মুর্তজা মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হলে ফিরেছেন। এর মধ্যে ইমামুল হোসেন নামে একজন গুরুতর আহত বলে জানা গেছে।
সাদ্দাম-ইনান পক্ষের আহতরা হলেন অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ কবীর এবং ফলিত গণিত বিভাগের ফুয়াদ বিন রায়হান।বিষয়টি নিয়ে পালটাপালটি বক্তব্য পাওয়া গেছে।
সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী রুকনুজ্জামান রাব্বি যুগান্তরকে বলেন, তানভীর ভাইয়ের অনুসারীরা গত কয়েক মাস ধরেই হলের অন্য গ্রুপের সিট দখল করতে আসছে।
গতকাল (সোমবার) বর্ধিত ভবনের ৫০০৬ নম্বর রুমটি জোরপূর্বক দখল করতে আসে এবং হামলা চালায়। এ কারণে হলের অন্য গ্রুপগুলো একত্রিত গয়ে তাদের বাধা দেয়। বাধা পেয়ে তারা শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীদের এনে বর্ধিত ভবনের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।
অন্যদিকে তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী হল ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক আসাদ খান বলেন, ৫০০৬ নম্বর রুমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকেন। কিন্তু সোমবার রাতে ইনান ভাই ও সাদ্দাম ভাইয়ের অনুসারীরা রুমটি দখল করতে আসে। তারা রুমে থাকা এক সাধারণ শিক্ষার্থীর মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ খবর পেয়ে আমরা রুমে গিয়ে ওই ছেলেকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু যাওয়ার পথে শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের প্রায় দশজন আহত হয়। এছাড়া তারা আমাদের প্রায় ১২টি রুমে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।এদিকে বর্ধিত ভবনে মারামারির মাঝেই ছাত্রলীগের এক পক্ষ হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের রুমে হামলা চালায়। যদিও এতে কেউ আহত হননি।
এ বিষয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, ফজলুল হক হলের দক্ষিণ ভবনে সিট নিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হয়। আমি আমার রুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ১০ থেকে ১২ জন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের জন্য রাতের খাবারের আয়োজন করি। খাওয়া শেষে সবাই রুমে অবস্থান করছিলাম। এ অবস্থায় রাত দেড়টার দিকে ৮ থেকে ১০ জন দেশীয় অস্ত্রসহ আমার রুমে হামলা করে। হামলা করে তারা দ্রুতই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলি এবং তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের অনুসারী।
তিনি বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপসম্পাদক শাওন চৌধুরী, দপ্তর উপসম্পাদক জিহাদুল ইসলাম, সমাজসেবা সম্পাদক আসাদুল্লাহ আসাদ এবং উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক আল-কাওসার আহমেদকে চিহ্নিত করতে পেরেছি।
আনোয়ার হোসেনের রুমে হামলার বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার সকালে মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের ২২ জন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। তারা রুমে হামলাকারীদের বিচার দাবি করেন।
বে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের আশ্বাসে তারা অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন।এ বিষয়ে তানভীর হাসান সৈকত বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে তদন্ত অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।