প্রতিবাদের মুখে দু’টি বই প্রত্যাহারের ঘোষণা, তারপরও বইয়ের পক্ষে দিপু মনির সাফাই
পিবিসি নিউজ ডেস্কঃ প্রতিবাদের মুখে দু’টি বই প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলামের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুইটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।এতে আরো বলা হয়েছে, শ্রেণিগুলোর জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তকসমূহের কতিপয় অধ্যায়ের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। পাঠ্যপুস্তকগুলোর অন্যান্য সব অধ্যায়ের পাঠদান অব্যাহত থাকবে।
এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। একদিকে বলা হয়েছে বই দু’টি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আবার একই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তকসমূহের কতিপয় অধ্যায়ের সংশোধন করা হবে। পাঠ্যপুস্তক গুলোর অন্যান্য সব অধ্যায়ের পাঠদান অব্যাহত থাকবে। এখানেই শুভঙ্করের ফাঁকি। প্রতিবাদ মুখর পরিস্থিতি সামাল দিতেই কি তাহলে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এই বই দু’টির পুরোটাই ইসলাম বিদ্বেষী ও জাতীয় ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের বিরোধ। হিন্দুত্ববাদের ইতিহাস দিয়ে সাজানো হয়েছে এই দু’টি বই। এছাড়া অন্যান্য বইয়েও ইসলামবিদ্বেষী জাতীয় ঐতিহ্য বিরোধী পাঠ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।ইসলামবিদ্বেষী বই গুলোর পুরোটাই বাতিল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ অব্যাহত থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বই দু’টি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার আগে দুপুরে চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে একটি করে বই বন্ধ থাকবে। এই দুইটি বই পড়ার দরকার নেই। বই দুটি নতুন করে তৈরী করে দেব। হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ইশানবালা কাশেম উলুমুল মাদ্রাসা মাঠে উঠান বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
দিপু মনি বলেন, পাঠ্যবই নিয়ে লোকজন বলছে- মনে হয় এটা না থাকলেই ভালো হয়। আমরা নতুন বই আবার তৈরি করে দেব।দিপু মনির এই কথা থেকেও স্পষ্ট লোকজন বলছে বলেই প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তাদের চিন্তা অনুযায়ী ইসলাম বিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী আর এস এস-এর চিন্তা ও চেতনা অনুযায়ী সাজানো পাঠ্যপুস্তকের পক্ষেই তাঁর সাফাই।ইসলাম বিদ্বেষী ও জাতীয় ঐতিহ্য বিরোধী পাঠ্যবইয়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন বই দু’টিতে কোন ইসলামবিরোধী কিছু নেই। তারপরেও আমরা মানুষের কথা শুনি।
অথচ, বই দু’টির প্রতিটি অধ্যায়ে হিন্দুত্ববাদের প্রচারণা রয়েছে। সুলতানি আমলকে বলা হয়েছে বিদেশীদের শাসন।
বখতিয়ার খিলজীকে বিদেশী আক্রমণকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বই গুলোতে। যদিও সুলতানি আমলে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র রাজ্য গুলোকে একত্রিত করে সর্ব প্রথম বাংলা নামে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মূলত শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাঙ্গাল বা বাংলা নামে প্রথম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন সুলতানি আমলে।
আর এই শাসনকালকে বিদেশীদের শাসন বলে চিহ্নিত করা তৈরি করা বই গুলোর পক্ষে সাফাই গেয়ে দিপু মনি ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পক্ষেই এখনো বলে যাচ্ছেন।তিনি মানুষকে নসিহত করে বলেন, ধর্ম একটা পবিত্র জিনিস। এটা নিয়ে মিথ্যা কথা বলা চলে না। যারা এই মিথ্যাচার করছে তাদের কথা বিশ্বাস করবেন না। বইয়ের মধ্যে কী আছে তা নিজেরা একটু পড়ে দেখুন। তারা কী বলে এটা বিশ্বাস করবেন না।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটোয়ারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আহসান উল্লাহ, জেলা পরিষদের সদস্য খোরশেদ আলমসহ আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।