চার জেলায় বিএনপির পদযাত্রায় হামলা-সংঘর্ষ
পিবিসি নিউজ ডেস্কঃ চার জেলায় বিএনপির পদযাত্রায় হামলা-সংঘর্ষদেশের চার জেলায় শনিবার বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশসহ বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
ঝালকাঠিতে পদযাত্রা শেষে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ হয়েছে।নীলফামারীতে বিএনপির সমাবেশে হামলা করে চেয়ার ভাঙচুর ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
কুমিল্লার দেবিদ্বারে পুলিশের বাধার একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। নেত্রকোনায় লাঠিসোঁটা নিয়ে বিএনপির পদযাত্রায় হামলার অভিযোগ ওঠে আওয়ামী লীগ নেতকর্মীদের বিরুদ্ধে।পুলিশ ঝালকাঠি, বাগেরহাট ও নেত্রকোনা থেকে বিএনপির ৪১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, একই দিনে আওয়ামী লীগেরও কর্মসূচি থাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপির নেতাদের কর্মসূচি না করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা পুলিশের আহ্বান উপেক্ষা করে।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ঝালকাঠি : বেলা ১১টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে শহরের আমতলা সড়কে জেলা বিএনপির কর্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা বের হয়। এটি কিছু দূর গেলে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে পদযাত্রাটি কালীবাড়ি সড়ক, পোস্ট অফিস সড়ক ঘুরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে ৬ পুলিশ সদস্য এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিবসহ ৯ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ এ ঘটনায় জেলা যুবদলের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমানসহ ১৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ হোসেন, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন, জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রবিউল হোসেন তুহিন ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান।আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন ঝালকাঠি সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ফিরোজ কামাল, এসআই মো. শফিকুর রহমান, খোকন হাওলাদার ও নজরুল ইসলাম, এএসআই কুহিন আহম্মেদ শিপন ও কনস্টবল মতিয়ার রহমান। তাদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঝালকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, পদযাত্রা শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিই। এ সময় যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়।জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিম জাকির বলেন, পুলিশ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
নীলফামারী : একই এলাকায় দুই দলের সমাবেশ নিয়ে শুক্রবার থেকেই শহরে টানটান উত্তেজনা দেখা দেয়। শনিবার বেলা ১১টায় শহরের পৌর সুপার মার্কেটের উত্তরপ্রান্তে আওয়ামী লীগের সমাবেশ শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতারা মার্কেটের দক্ষিণ প্রান্তের মঞ্চে অবস্থান নেন। এদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মিছিল বিএনপির কার্যালয়ে আসার সময় বাজার ট্রাফিক মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এর পরপরই মার্কেটের উত্তর প্রান্ত থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দক্ষিণ প্রান্তে বিএনপির সমাবেশস্থলে হামলা চালান।
এ সময় হামলাকারীরা চেয়ার ভাঙচুর করেন, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে মঞ্চ দখলে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর করেন। এতে বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানান জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক বলেন, আমাদের সমাবেশ চলা অবস্থায় অপরপ্রাপ্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করে স্লোগান দেয় বিএনপি।
কুমিল্লা ও দেবিদ্বার : বিকালে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গোমতায় পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল। কিন্তু ওই স্থানে পুলিশ বাধা দেওয়ায় তারা চলে আসেন মহাসড়কের খাদঘর এলাকায়। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা শুরু করলে পুলিশ আবারও বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাগ্বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
এতে দাউদকান্দি উপজেলা বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ভিপি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া চান্দিনা থানার কনস্টেবল শিপন হোসেন ও হাসান পারভেজ আহত হন। তাদের চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।এ বিষয়ে চান্দিনা থানার ওসি শাহাবুদ্দিন খান বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা মহাসড়কে নাশকতার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
নেত্রকোনা : বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সকালে পদযাত্রা কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরের পারলা বাসস্টেশন, বনোয়াপাড়া, কুড়পাড়, মোক্তারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হতে থাকেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালান। তাদের ব্যানার, ফেস্টুন ছিনিয়ে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস ভাঙচুর করেন এবং বেশকিছু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনান। এ সময় ২৩ জন নেতাকর্মী আহত হন। পরে পুলিশ বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মীকে আটক করে। এর আগে শুক্রবার রাতে বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন নেত্রকোনা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, বারহাট্টা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মানিক আজাদ, কেন্দুয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম। তারা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করে। পরে পুলিশ উলটো আমাদের ৫ নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়।
বাগেরহাট : সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহরের মুনিগঞ্জ এলাকা থেকে বিএনপি পদযাত্রা শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই পদযাত্রাটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
এ সময় জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালামের বাড়ি থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রকৌশলী এটিএম আকরাম হোসেন তালিম, পৌর বিএনপির সভাপতি শেখ শাহেদ আলী রবিসহ অন্তত ২০ জনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।