সংবিধান কোনো ধর্মগ্রন্থ নয় যে পরিবর্তন করা যাবে না: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
পিবিসি নিউজ ডেস্কঃ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সংবিধান দেশ ও জনগণের জন্য, কোনো ব্যক্তি বা দলের জন্য নয়। প্রয়োজনে সংবিধান অনেকবারই সংশোধন এবং পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া আগে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তারপর সংবিধান রচিত হয়েছে। সুতরাং সংবিধান কোরআন, বাইবেল, গীতা অথবা অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ নয় যে, তা পরিবর্তন করা যাবে না, সংবিধান পরিবর্তন করা যায়।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ আটক সব রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) এই মানববন্ধনের আয়োজন করে ।
তিনি বলেন, আজকে তারা (সরকার) বলে, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ১৯৯৫-৯৬ সালেও ছিল না। তখন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জামায়াতে ইসলামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলে এবং সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছরেরও আগে তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। আপনারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় এসেই সর্বপ্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেছেন, বাতিল করেছেন।
মানববন্ধনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চাই। যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ, যারা দেশের মালিক, তারা নিজেদের সুচিন্তিত মনে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে দিনের ভোট দিনে দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে- এই দাবিতেই আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম।
আওয়ামী লীগের মুখে সংবিধানের কথা মানায় না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালে সংবিধান লেখার কয়েকদিন পরেই আপনারা (আওয়ামী লীগ) প্রথম সংশোধন করলেন। তারপর দ্বিতীয়, তৃতীয় সংশোধন করলেন। চতুর্থ সংশোধনের মধ্য দিয়ে আপনারা দেশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিলুপ্ত করলেন। এক দলীয় এক নেতার শাসন ব্যবস্থা করলেন। গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করলেন, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করার জন্য সংবাদপত্রগুলো বাতিল করলেন। সুতরাং আপনাদের মুখে সংবিধানের কথা মানায় না।
সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলছে না অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সংবিধান মতে দেশ চললে দিনের ভোট আগের রাতে পুলিশ সিল মারতো না। পুলিশের দায়িত্ব নির্বাচনে ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়া। সেই পুলিশই কিনা আগের রাতে এমন সিল মারলো। সেই নির্বাচনে কোথাও কোথাও ১০০ ভাগেরও বেশি ভোট পড়ল। সেই নির্বাচনে মরা মানুষ, জীবিত মানুষ, বিদেশে থাকা সবাই ভোট দিতে পারল। এমনকি যারা ভোটার হয়নি, তারাও ভোট দিল।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ইদানিং বলেন, ভোট চোরদের মানুষ বিশ্বাস করে না। আপনারা (আওয়ামী লীগ) স্বঘোষিত ভোট চোর, ভোট ডাকাত। সুতরাং, আপনাদেরকে মানুষ বিশ্বাস করে না। আপনাদের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশে যদি নির্বাচন ব্যবস্থা রাখতে চান, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি নিঃসন্দেহে পদত্যাগ করেন।
দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণে দেশের অর্থনীতি আজকে ফোকলা হয়ে গেছে মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একমাত্র বিদ্যুৎ খাতেই যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তা আপনারা (সরকার) নিজেরাই স্বীকার করেছেন।
বিদ্যুতের যেসব প্রকল্প করা হয়েছে, সেগুলোর অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না, জবাব চাওয়া যাবে না, মামলা করা যাবে না, অভিযোগ করা যাবে না এমন ইনডিমিনিটি (দায়মুক্তির) বিল পাস করেছেন। দুর্নীতি ঢাকার জন্য যে সংবিধানে আপনারা (সরকার) আইন পাস করেছেন, সেই আইন জনগণ মানতে বাধ্য নয়। সেই কারণেই সংবিধান পরিবর্তনশীল।