ভলান্টিয়ার্স কমিটি করে ‘ভ্রাম্যমান কনসুলেট সেবা’ আয়োজনের দাবিতে বাফেলো শহরে সংবাদ সম্মেলন।
গত ১৮ই অক্টবর, ২০২৪, রোজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বাফেলো শহরের বাংলাদেশ প্লাজার বাফেলো বাংলা অফিসে সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশী নেতৃবৃন্দের আয়োজনে এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কমিউনিটির বিভিন্ন সেক্টর থেকে নেতৃবৃন্দ এই সাংবাদিক সম্মেলনে যোগদান করেন। শেখ হাসিনা পতনের দাবিতে সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্টের ছাত্র বিক্ষোভে অংশ নেয়া কোমলমতি ছাত্র জনতার উপরে বাফেলো বাংলাদেশ সোসাইটির কর্ণধার ও আওয়ামী নেতৃবৃন্দের প্রকাশ্য হামলার কারণে যেই বিতর্কের শুরু হয়েছিল সেই বিতর্ক যেন কমিউনিটির কোথাও প্রভাব ফেলতে না পারে সেই জন্য কোন সংগঠনের ব্যানারে নয় বরং একটি “সার্বজনীন ভলান্টিয়ার্স কমিটির” মাধ্যমে এই সেবা দেয়া হলে সকলের কাছে বেশী গ্রহণযোগ্য হবে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পিবিসি টুয়েন্টিফোর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান লিটু, কুমিল্লা সোসাইটি অফ বাফেলোর সভাপতি হাবিবুর রহমান (হাবিব), যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক নাজমুল আলাম, শারীরিক অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে না পারলেও সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজনের অন্যতম কারিগর ছিলেন ঢাকা মহানগর তাঁতীদলের সাবেক সদস্যসচিব আব্দুর রহিম, নিউইয়র্ক মহানগর বিএনপি দক্ষিণের সাবেক সদস্য তরিকুল ইসলাম প্রিন্স মৃধা, নিউইয়র্ক মহানগর বিএনপি উত্তরের সাবেক সদস্য আবু জাফর ফরাজী, বাফেলো সিটি হলে কর্মরত ও কমিউনিটি একটিভিস্ট মোস্তাফা জাবেদ, বরিশাল বিভাগীয় সোসাইটি অফ বাফেলোর সভাপতি সৈয়দ ঝিলু, বরিশাল বিভাগীয় সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, বিশিষ্ট কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও কমিউনিটি একটিভিস্ট মোঃ জিন্নাহ, বাফেলো বিএনপি নেতা মোঃ জাইদ বিশ্বাস, বাফেলো বিএনপি নেতা ও ঢাকা সমিতি বাফেলোর অন্যতম নেতা সালমান সরকার, বাফেলো বি এন পি নেতা মনির আহসান, বাফেলো বিএন পি নেতা তোফাজ্জল হোসেন, ঢাকা কলেজের সাবেক ছাত্রদল নেতা আকবর হোসেন, সানজিদ, আল মুনছুর সহ আরো অনেকে।
বাংলাদেশ সোসাইটির ব্যানারে প্রতিবছর ভ্রাম্যমান কনসুলেট সেবা দেয়ার কারণে বাফেলোবাসী ব্যাপক সুফল পেয়ে আসছিলেন এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃবৃন্দ যারা মূলত বাফেলো আওয়ামীলীগের নেতা, গত জুলাই আগস্ট মাসের ছাত্র জনতার আন্দোলনে ৩০সে জুলাই বেইলি এভিউনিউর বিক্ষোভস্থলে প্রকাশ্যে ছাত্র জনতার উপর হামলা করেছিলেন এবং পুলিশি হস্তক্ষেপে সেটা নিরসন হয়েছিল। এই হামলা ছিল কমিউনিটির জন্য একটি কলংকজনক অধ্যায়। এই হামলার কোন প্রভাব যেন ভ্রাম্যমান কনসুলেট সার্ভিসকে কলংকিত করতে না পারে সেজন্য সকল আঞ্চলিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি ভলান্টিয়ার কমিটি গঠনের মাধ্যমে সেবা দেয়ার আবেদন জানানো হয় এবং কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই সার্ভিস বন্ধ করতে না পারে সেজন্য ছাত্র জনতার আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়েছে।
তরুণ সমাজ যে কোনভাবেই হোক সমন্বয় করে নতুন একটি ভলান্টিয়ার্স কমিটি গঠন করবে এবং সেই কমিটির মাধ্যমে সেবা দেয়ার আহবান জানানো হয়েছে। তবে কোন প্রকার সময় ক্ষেপন না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
যদিও কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সোসাইটি একটি সাংবাদিক সম্মেলনে কয়েকজন কমিউনিটি নেতাকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছিলেন যে তারা নাকি ইমেইল করে ভ্রাম্যমান কনসুলেট সেবা বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে তাই সংশ্লিষ্ট সেই সকল নেতৃবৃন্দ কনসুলেট অফিসে তাদের পাঠানো ইমেইলের কপি নিয়ে এসে সাংবাদিকদের মাঝে বিতরণ করেন এবং মিথ্যা প্রোপাগান্ডার যথাউপযুক্ত জবাব দিয়েছেন।
আসলে বাফেলো কমিউনিটির কোন নেতাই ভ্রাম্যমান সেবা বন্ধ করতে চাইছে না কেবল বিতর্কিত নেতৃত্বের পাশাপাশি নতুন কমিউনিটি নেতৃবৃন্দকে সংযুক্ত করে ভলান্টিয়ার্স কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তরুণ সমাজকে সামনে এগিয়ে এসে ত্রিধা বিভক্ত কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ করে নতুন উদ্যমে সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সাংবাদ সম্মেলনটি শেষ করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য হুবহু নিম্নে তুলে ধরা হলো:
বাফেলো শহরে ভ্রাম্যমান কনসুলেট সার্ভিস নিয়ে বিভ্রান্তি কাটাতে সাংবাদিক সম্মেলন
তারিখ: ১৮ই অক্টবর ২০২৪
রোজ: শুকত্রবার।
সম্মানীত সুধী,
আসসালামু আলাইকুম, বাফেলো শহরে ভ্রাম্যমান কনসুলেট সার্ভিস প্রসঙ্গে জরুরি সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের জানাই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এই মুহূর্তে মিডিয়ার মাধ্যমে যারা অনুষ্ঠানটি দেখছেন কিংবা পরবর্তীতে দেখবেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আজকে আমাদের উপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করলাম।
প্রথমেই দ্রুততম সময়ে গড়ে ওঠা বাফেলো শহরে প্রতিকূল পরিবেশ কাটিয়ে শান্তির শহর হিসাবে যারা তৈরী করেছেন সেই সকল প্রবাসী কলোম্বাসদেরকে জানাই কৃতজ্ঞতা। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাফেলো শহরটি এত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশিদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, হয়ে উঠেছে আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশিদের জনবসতি তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
মনে রাখতে হবে বেশি মানুষ, বেশি চাহিদা। এই কনসেপ্টের উপর ভিত্তি করে বাফেলো শহরে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশী বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। দরকার পরছে পাসপোর্ট নবায়নের প্রয়োজনীয়তা, নো ভিসা রিকোয়ারমেন্ট ভিসা, পাওয়ার অফ এটর্নি ইত্যাদি ইত্যাদি। আর তাই একান্ত জরুরি দরকার হয়ে পরেছে বাংলাদেশী কনসুলেট সার্ভিস।
আজ থেকে ৮ বছর আগে কমিউনিটি ছোট ছিল এবং কতিপয় মুরুব্বিদের প্রচেষ্টায় এবং নিউইয়র্ক কনসুলেট অফিসের মহানুভবতায় শুরু হয়েছিল ভ্রাম্যমান কন্সলেট সেবা প্রদান। বাংলাদেশ সোসাইটি অফ বাফেলোর সৌজন্যে হাজারো প্রবাসীরা উপকৃত হয়েছেন, তাই উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি ভ্রাম্যমান সার্ভিস দিয়ে প্রবাসীদের পাশে থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কনসাল জেনারেল সহ কর্মকর্তাবৃন্দকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
বর্তমান প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে বাফেলো বাংলাদেশী কমিউনিটি হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের এক বিশাল পরিবার। এই পরিবারকে সেবা দিতে হলে বেশি মানুষের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। হাতেগোনা কয়েকজন মানুষের নেতৃত্বে এতবড় কমিউনিটির সেবা দেয়া সম্ভব নয় তাই প্রথম থেকে আমাদের দাবি ছিল – একক কোন সংগঠন নয় বরং একটি সার্বজনীন ভলান্টিয়ার্স কমিটি করে সবাইকে সম্পৃক্ত করে কনসুলেটের ভ্রাম্যমান সেবাটি ফলপ্রসূ করতে হবে।
এই বিষয়ে কনসুলেট অফিসের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কনসাল জেনারেল বরাবরে আমরা কয়েকটি ইমেইল পাঠিয়েছি- সেখানে কোথাও আমরা ভ্রাম্যমান সার্ভিস বন্ধের আহ্বান জানাইনি বরং কমিউনিটির সকলকে সম্পৃক্ত করণের লক্ষ্যে একটু সময় চেয়েছিলাম। সেই ইমেইলের লেখাটি নিম্নে হুবহু দিয়ে দিলাম:
মাননীয় কনসাল জেনারেল সাহেব,
আসসালামু আলাইকুম। আশাকরি ভালো আছেন। প্রতিবছর আপনাদের ভ্রাম্যমান সেবার বদৌলতে শত শত প্রবাসীরা উপকৃত হচ্ছেন সেই জন্য অন্তর থেকে জানাই ধন্যবাদ।
উদীয়মান বাফেলো শহরে দিন আর দিন কমিউনিটি বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হচ্ছে সেই সাথে ছড়িয়ে পড়ছে রাজনৈতিক- অরাজনৈতিক, সাহিত্যিক সংগঠন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে বাফেলো শহরে সকল ভলান্টিয়ার্সদের “ইনক্লুসিভ” কমিটি করে নতুনভাবে আপনাদের যাত্রা শুরু করলে ভ্রাম্যমান সেবা প্রদানের বিষয়টা আরো বেশি গ্রহণযোগ্য ও সম্মানিত হবে বলে আমরা মনে করি এবং এই বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
বিগত দিনে যেই গ্রূপ আপনাদের সহযোগিতা করতেন তারা মূলত আওয়ামীলীগ ঘরানার লোক বলে পরিচিত তাই কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে। আশাকরি সকল কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ করে পরিসেবা দিলে আপনারা সকলের ভালোবাসা পাবেন। সেক্ষত্রে আমার কয়েকটি সাজেশন চিন্তা করে আমলে নেয়ার বিশেষ আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রথমত: ভ্রাম্যমান সেবা প্রদানের বর্তমান ঘোষিত দিন ও স্থান আপাদত স্থগিত করে একটু সময় নিয়ে নতুন দিন ও স্থান নির্ধারণ করার দাবি করছি।
দ্বিতীয়ত: বাফেলো কমিউনিটির আপাদত যাদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান সেবা প্রদান করা হচ্ছে তারা বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হওয়ার কারণে তাদেরকে পাশে রেখে নতুনভাবে সর্বজন গ্রহযোগ্য “প্রবাসী দেশপ্রেমিক ভলান্টিয়ার্স কমিটি” গঠনের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সেবার ব্যবস্থা করার আহ্বান করছি।
তৃতীয়ত: বাফেলো শহরে প্রবাসীদের বসতি বৃদ্ধির পাশাপাশি কমিউনিটি সংগঠনের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে গেছে তাই সম্ভাব্য প্রতিটি সংগঠন থেকে দু’চারজন করে নেতৃবৃন্দ “প্রবাসী দেশপ্রেমিক ভলান্টিয়ার্স কমিটিতে” ইনক্লুড করে সেবা প্রদানের পরিবেশটাকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার একটা কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের বিশেষ আহ্বান রইলো।
কমিউনিটির বিতর্ক কাটিয়ে সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি ভলান্টিয়ার্স কমিটি করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন তাই আপনাদের ভ্রাম্যমান পরিষেবার সময় ও স্থান পরিবর্তন করে একটু সময় দেয়ার জোড় দাবি জানাচ্ছি।
আশাকরি সবাই মিলে একটি ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
এই বিষয়ে যেকোন প্রশ্ন করতে চাইলে অনুগ্রহপূর্বক আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। ধন্যবাদ।
আমাদের ইমেইলকে গুরুত্ব দিয়ে জনাব কনসাল জেনারেল সাহেব ভ্রাম্যমান সেবা প্রদানের তারিখ পরিবর্তন করেছেন। কমিউনিটির সকলকে সম্পৃক্ত করে নতুনভাবে নতুন তারিখে এই সেবার আয়োজন করা সম্ভব হবে বলে সবাইকে জানিয়েছেন। অথচ দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ সোসাইটির কয়েকজন নেতা আমাদের ভিশনকে অন্যভাবে কমিউনিটিতে উপস্থাপন করেছেন, কনসুলেট সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য তারা আমাদেরকে দায়ী করে লাইভ মিটিং করেছেন। যেটি ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিভক্তি চাইনা, আমরা চাই ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশী কমিউনিটি।
এখন প্রশ্ন হলো কমিউনিটির সকলকে সম্পৃক্ত করে নতুন সার্ভিসের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া কি আমাদের অন্যায় ছিল? যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে আমরা দুঃখিত। আর যদি আপনারা মনে করেন সকলকে সম্পৃক্ত করে রাষ্ট্রীয় কোন কাজকে সার্বজনীন করার চেষ্টা করে আমরা কোন অন্যায় করিনি তাহলে আপনাদের সকলকে অনুরোধ জানাব আসুন সবাই মিলে সার্বজনীন ভলান্টিয়ার্স কমিটি করে নতুনভাবে ভ্রাম্যমান কনসুলেট সেবার আয়োজন করি এবং কমিউনিটির সকলের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াই।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আজকের মতো সাংবাদিক সম্মেলনের প্রথম পর্ব শেষ করছি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আল্লাহ হাফেজ।
সাংবাদিক সম্মেলনের পুরো ভিডিও:
https://www.facebook.com/share/v/F3XMBsA8XoyBmzGd/