ভারতের বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা মোদির
পিবিসি নিউজঃ কৃষকদের প্রায় এক বছরের আন্দোলনের পর প্রত্যাহার করা হলো ২০২০ সালে পাস হওয়া বিতর্কিত তিন কৃষি আইন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে কৃষি আইনগুলো প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন। সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দু এ খবর জানিয়েছে।
দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের নির্বাচনের আগে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের সঙ্গে জোট গড়ার ক্ষেত্রে মোদির এ পদক্ষেপ বড় ভূমিকা হতে যাচ্ছে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
এদিন মোদি বলেন, ‘কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ মাসে শুরু হতে যাওয়া পার্লামেন্ট অধিবেশনে কৃষি আইনগুলো প্রত্যাহার করব। আমি সবাইকে অনুরোধ করব- আন্দোলন ছেড়ে একটি নতুন সূচনা করার। শিগগিরই আইন প্রত্যাহারের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এবার আপনারা সবাই ক্ষেতে ফিরে যান, পরিবারে ফিরে যান।’
নরেন্দ্রে মোদি এদিন নিজের বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, ‘গুরুনানকের প্রকাশ পর্ব। দেশবাসীকে এ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এ উপলক্ষে খুলেছে কর্তারপুর করিডোর। গুরু নানকের বাতলে দেওয়া সেবার পথে হেঁটেই দেশবাসীর জন্য কাজ করছে সরকার। আমি গত পাঁচ দশকে কৃষকদের দুর্গতি দেখেছি। তাই, ২০১৪ সালে যখন দেশ আমাকে নির্বাচিত করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেয়, তখন থেকে ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্যে কাজ করতে চেয়েছি। আজ গুরু পর্বে কারো ওপর দোষারোপ করার সময় নয়।’
নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, ‘দেশের ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন ছোট কৃষক। তাদের জমির পরিমাণ দুই হেক্টরের কম। তাদের জীবনের অবলম্বন এ অল্প জমি। প্রায় ১০ কোটি এমন ছোট কৃষক রয়েছেন। এ অল্প জমিতেই তারা নিজেদের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য কাজ করছেন। তাই, বীজ, বিমা, বাজার আর সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে কাজ করেছি। আমরা ফসল বিমা প্রকল্প আরও কার্যকরী করেছি। আরও বেশি সংখ্যক কৃষককে এর অধীনে নিয়ে এসেছি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কিষাণ সয়েল হেলথ কার্ড দিয়েছি। এতে ফলন বেড়েছে। ছোট কৃষকদের এক লাখ ৬২ হাজার কোটি রুপি দিয়েছি। কৃষকদের কষ্ট যাতে সঠিক মূল্য পায়, সে কাজ করেছে সরকার। গ্রামীণ বাজারকে শক্তিশালী করেছি। আমরা এমএসপি বাড়িয়েছি।’
মোদি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকারের কৃষি বাজেট বিগত কয়েক দশকে সবচেয়ে বেশি। কৃষকদের উন্নয়নে আমরা এ কাজ করছি। ক্ষুদ্র কৃষকদের শক্তি বাড়াতে তাদের সংগঠন তৈরির কাজ চলছে। মাইক্রো ইরিগেশন ফান্ড দ্বিগুণ করে ১০ হাজার কোটি রুপি করা হয়েছে। পশু পালন ও মৎসপালনের সঙ্গে যুক্ত কৃষকরাও কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। কৃষকের সামাজিক অবস্থানের উন্নয়নে আমাদের সরকার কাজ করছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের ক্ষুদ্র কৃষকের কথা ভেবেই তিনটি কৃষি বিল আনা হয়েছিল। দেশের কৃষক সংগঠন, কৃষি অর্থনীতিবিদদের এ দাবি বহুদিনের। এর আগের সরকারও এ নিয়ে ভেবেছে। এরপরই সংসদে কৃষি বিল নিয়ে আলোচনা করে বিল পাস করানো হয়। কয়েক কোটি কৃষক এ বিলকে সমর্থন জানিয়েছে। ভালো মনে এ আইন আনা হয়েছিল। কৃষকের স্বার্থে আনা এ বিল আমরা কয়েকজনকে বোঝাতে পারিনি। কয়েকজন কৃষকই এর বিরোধিতা করছেন। তাও এটা আমাদের জন্য বড় বিষয়। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি আমরা। আমরা তাদের কথাও বোঝার চেষ্টা করেছি। সরকার আইন বদলাতেও রাজি ছিল। এরই মধ্যে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে চলে গেছে।’