নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে লড়বেন বাংলাদেশি মৌমিতা আহমেদ
আকিব মাহমুদ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মিনি বাংলাদেশখ্যাত কুইন্স-জ্যামাইকা এলাকা থেকে সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতা ঘোষনা করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুনী মৌমিতা আহমেদ। গত ১৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইনে জুম ওয়েবিনার এর মাধ্যমে নিউইয়র্কের ডিষ্ট্রিক্ট ২৪ থেকে সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে অংশগ্রহনের ঘোষনা দেন তিনি।
নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষনার কারন জানাতে গিয়ে মৌমিতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালীরা অবহেলিত, নিষ্পেষিত হয়ে জীবন যাপন করছে। তারা প্রয়োজনীয় ন্যায্য অধিকার ও দাবী আদায় করতে পারছে না। রাজনৈতিক ব্যাপারগুলো সম্পর্কে ধারনা না থাকায় তারা পিছিয়ে আছে এবং ক্রমাগত বৈষ্যমের স্বীকার হচ্ছে। পিছিয়ে পরা কমিউনিটিকে রক্ষায় আমি লড়াই করে যাচ্ছি।
এসময় মৌমিতা বলেন এই পৃথিবীতে যেকোনো কিছুর চেয়ে আমি আমার মা’কে বেশি ভালোবাসি। তিনি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন, আমাকে এবং আমার ভাইকে বড় করতে গিয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। তিনি আমার অনুপ্রেরনা। আমি সেই সমস্ত মায়েদের জন্য সিটি কাউন্সিলর নির্বাচন করছি যারা তাদের মেয়েদের জন্য বড় স্বপ্ন দেখেন, নিজ পরিবারকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে ৮০ ঘন্টারও বেশি সময় ফাস্টফুডে কাজ করেন। আমি তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে চাই।
মৌমিতা আরও বলেন নিউইয়র্কে কমিউনিটির অন্যতম সমস্যা এফোর্ডেবল হাউজিং। আবাসন সংকটসহ এখানে বাড়ি ভাড়া ও কেনার ক্ষেত্রে নানান রকম ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয় সাধারণ নাগরিকদের। অথচ আবাসন সুবিধা প্রত্যেকটা মানুষের নাগরিক ও মৌলিক অধিকার। কিন্তু নিউইয়র্ক সিটি স্বল্প আয়ের নাগরিক ও প্রবীনদের সেই সুবিধা দিতে ব্যার্থ হয়েছে। নাগরিকদের মৌলিক ও নাগরিক অধিকার আদায়ে আমি লড়াই করব।
তিনি বলেন মহামারী করোনা সংক্রমন শুরু হলে নিউইয়র্কের স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে গত সেপ্টেম্বর মাসে ধাপে ধাপে বেশ কিছু স্কুল খুলতে শুরু করলেও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে বেশ কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আক্রান্ত হন। এই ঘটনার পরপরই ফের স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার পরিবেশ যেমন ব্যহত হচ্ছে অপরদিকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরাও। তাই স্কুলগুলোতে রিমোট লার্নিং শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
তাছাড়া যেকোনো ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় কমিউনিটি বন্ডিং বাড়াতে হবে। প্রশাসন এবং সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে আস্থা গড়ে তুলতে হবে। নিউইয়র্কে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশিরা বসবাস করে আসলেও মেইনস্ট্রিম রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করায় তাদের দাবী দাওয়াগুলো কখনই পূরন হয়নি।
মৌমিতা বলেন, নিউইয়র্কে করোনার ক্রান্তিকালীন সময়ে আমি কমিউনিটির পাশে থেকেছি। কুইন্স মিউচুয়াল এইডের মাধ্যমে পেন্ডেমিক চলাকালীন সময়ে ২ হাজারের অধিক মানুষের কাছে সাহায্য সহযোগীতা পৌছে দিয়েছি।
উল্লেখ্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি যে ক’জন নারী সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশ নিয়েছেন তার মধ্যে মৌমিতা অন্যতম। গত ২৩ বছর ধরে নিউইয়র্কে বসবাস করে আসা মৌমিতা বাংলাদেশিদের অধিকার আদায়ে লড়াই করে কমিউনিটির মানুষের কাছ থেকে কুড়িয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা । চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নিজেকে সক্রিয় রেখে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল স্টেট নির্বাচনে ডিষ্ট্রিক্ট ২৪ থেকে প্রতিদ্বন্দিতাও করেন তিনি। এবার প্রার্থী হলেন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে। তাছাড়া একজন বার্নি ডেলিগেট হিসেব বার্নিতে কাজ করছেন এবং ফিলাডেলফিলফিয়া ন্যাশনাল কনভেনশনেও তিনি একজন ডেলিগেট। তবে ভোটাররা তাদের মূল্যবান ভোটে কার পাল্লা ভারী করবেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছরের জানুয়ারী পর্যন্ত।