প্রসঙ্গ: যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি; স্বার্থান্বেষী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘কর্কশ’ সিদ্ধান্ত নেয়া বিএনপি হাইকমান্ডের জরুরী দায়ীত্ব!
পিবিসি নিউজ: দীর্ঘদিনের জটিলতা, একের পর এক ঝামেলা, উপঝামেলা উস্কে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার নাটের গুরুদের বিরুদ্ধে ‘দলীয় একশন” নিতে সচেষ্ট হওয়া জরুরি বলে বিএনপির শুভাকাঙ্খী ও জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করেন। এব্যাপারে বিএনপি হাইকমান্ডকে সঠিক পরামর্শ দেয়া অতীব জরুরি বলে পিবিসি নিউজকে টেলিফোনে জানিয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা সহ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ।
প্রায় ৮ বছরের আটকে থাকা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠন প্রক্রিয়া বর্তমানে গতিশীল, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য কমিটির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে ধীরগতি হলেও কার্যক্রম অব্যাহত আছে। মাত্র কয়েকদিন আগে মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত নিউজার্সি নর্থ, নিউজার্সি সাউথ ও ভার্জিনিয়া অঙ্গ রাজ্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং যথেচ্ছা স্বল্প সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানা যায়।
হঠাৎ করে আজ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রথম পাতায় “নিউজার্সি স্টেট বিএনপির কমিটি গঠনে লেনদেনের অভিযোগ” শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে, যেখানে অভিযুক্ত করা হয়েছে কমিটি গঠনের দায়ীত্বপ্রাপ্ত জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার এইচ খোকনকে নিয়ে। সংবাদে একটি মানিট্রান্সফার রশিদও প্রকাশিত হয়েছে; এখন ধরে নিলাম আনোয়ার এইচ খোকন যেকোন কারণে ওই ব্যক্তির থেকে টাকাটা নিয়েছেন কিন্তু প্রশ্ন হলো আনোয়ার এইচ খোকন কি এতটাই কাঁচা রাজনীতিবিদ যে কিনা লন্ডনে থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেন করবেন? বর্তমান ডিজিটাল যুগে ক্যাশের ঘুষ লেনদেনও ধরা পরে যায়, সেখানে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে বিএনপির সভাপতি বানানোর কথা বলে ব্যাংকের মাধ্যমে অগ্রিম ঘুষ নিয়েছিলেন? যদি এমনটা হয়েও থাকে অভিযোগকারী আদৌকি বিএনপির হাইকমান্ডে এব্যাপারে নালিশ করেছিলেন? বিচার চেয়েছিলেন? বিচার পাননি বলে মিডিয়াতে সংবাদ পরিবেশন করিয়েছেন? এসকল কোনো প্রশ্নের জবাব মিলবেনা কারণ এগুলি সবই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে দুর্বল করার অনৈতিক প্রচেষ্টা!
আসল ব্যাপার হলো যখনই কোন নেতাকে কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয় তখনই কোন না কোন গ্রূপ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সেটাকে নস্যাৎ করার প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত হয়ে পরে। নাম না জানা কর্মী থেকে আচমকা দলীয় দায়িত্ব অর্থাৎ সভাপতি – সেক্রেটারি হওয়ার খায়েশে যেকোন ভাবেই হোক ধার কর্য কিংবা সামান্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বিপাকে ফেলে দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, কিংবা তাদের সহযোগীদের। নিজে নিজেই চারিদিকে রটিয়ে বেড়ান দলের জন্য তাদের ত্যাগ তিতিক্ষ্যার কল্প কাহিনী। আসল দায়িত্ব পালনের যোগ্যতার বিবেচনায় যখন অন্য কোন নেতাকে দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয় তখনই দলীয় হাইকমান্ডে বিচার না দিয়ে সরাসরি মিডিয়ার দারস্ত হন এই সকল স্বঘোষিত নেতৃবৃন্দ। এসকল ঝামেলার কারণেই কয়েক দফায় উদ্যোগ নেয়ার পরেও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।
কোন নেতার পক্ষেই নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র এসে, অধিক সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে একান্ত সমালোচনা বিহীন কমিটি গঠন করা সম্ভব নয়। এব্যাপারে তৃতীয় সারির কোনো নেতা যখন দলীয় ব্যয় বহনে কিছুটা আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকেন তখনই তার মধ্যে সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি হওয়ার স্বপ্ন দেখা দেয়, অথচ নিজেকে নিয়ে ভেবে দেখেননা দলের জন্য তিনি কতটুকু উপযুক্ত! দলের ব্যয়ভার বহনে অবশ্যই আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন পরে, কারো থেকে কিছু টাকা ধার নেয়া বা মধ্যম সারির ওই কর্মীকে দিয়ে দলীয় কাজে কিছু পয়সা ব্যয় করানোর মানে এই নয় যে তাকেই দলের সভাপতি বা সেক্রেটারি করতে হবে। দলের চরম খারাপ মুহূর্তে যে যার অবস্থান থেকে কাজ করাটাই এখন জিয়া প্রেমের নিদর্শন, এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠনে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র কোন নেতাকে অভিযুক্ত করে মিডিয়াতে চাঁদাবাজির সংবাদ পরিবেশন করানো দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে বলে সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা মনে করছেন।
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কমিটি গঠনের শুরুতেই এমন নেতাদের বিচারের বিষয়ে কঠোর হতে হবে দলের হাইকমান্ডকে। যদি আনোয়ার এইচ খোকন লন্ডনে থেকে অভিযোগকারীকে সভাপতি বা সেক্রেটারি বানানোর কথা বলে ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে থাকেন এবং তাদেরকে সভাপতি সেক্রেটারি না বানিয়ে প্রতারনা করে থাকেন তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত আনোয়ার খোকনকে অনতিবিলম্বে দায়িত্ব থেকে বহিস্কার করতে হবে। আর যদি ব্যাংকের রশিদ দিয়ে টাকা লেনদেনের ব্যাপারটা অন্যকোন কারণে হয়ে থাকে তাহলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত, যাতে করে তিলে তিলে গড়ে তোলা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে কেও কলংকিত করতে না পারে।
আনোয়ার এইচ খোকন লন্ডন প্রবাসী, যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা না থাকাটাই স্বাভাবিক। তার উচিত গ্রূপ, উপগরূপে বিভক্ত দলীয় বিতর্কিত নেতাদের সাথে পরামর্শ না করে বিএনপি ঘরানার সাংবাদিকদের থেকে দলের ত্যাগী নেতাদের লিস্ট বের করা। যদিও তিনি সেখানে ব্যর্থ হয়েছেন, তিনি নাম জানা কিছু দলীয় বিতর্কিত নেতাদের পরামর্শেই এগিয়ে যাচ্ছেন। যাদের নিয়ে সমালোচনা চাউর আছে তাদেরকে দূরে রেখে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করাই বুদ্ধিমানের কাজ, হয়তো আনোয়ার খোকন সেখানে ব্যর্থ হতে পারেন তাই বলে দলীয় ফোরামে আলোচনা বা নালিশ না করে মিডিয়ার মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি নস্যাৎকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন।
এর আগে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি বিএনপির কমিটি করতে এসে হোঁচট খেয়েছিলেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন। আরেক দফায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান এবং তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সায়েম।
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম এহসানুল হক মিলন অতীব স্বচ্ছতার সাথে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি করতে গিয়ে ষড়যন্ত্রে আটকে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান এবং তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সায়েম কোন একটি গ্রূপের প্রতি বায়াস্ট হয়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগে নিয়েছিলেন, হোটেলে গেটে নির্দিষ্ট গ্রূপের কিছু টোকাই কর্মীদের বেষ্টনীতে থাকতেন, এতে করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বিগড়ে যান এবং টোটাল কমিটি গঠন প্রক্রিয়াটাই নষ্ট হয়ে যায়। কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার পরে নির্দিষ্ট গ্রূপের টোকাই মাস্তানরাই আবার মাহিদুর রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে অনৈতিক অর্থ লেনদেনের অভিযোগ তোলেন। এভাবেই বিভিন্ন সময়ে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে থাকে। তাই জ্যেষ্ঠ নেতাদের পরামর্শ; কোনভাবেই কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত হতে দেয়া যাবেনা, দলের হাইকমান্ডকে আরো সক্রিয় হতে হবে, অভিযোগ খতিয়ে দেখে তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের বিচার করতে হবে, দলীয় অভ্যন্তরীণ বিষয় দলীয় ফোরামে না তুলে বরং মিডিয়ায় সংবাদ পরিবেশন করে দলকে হেয় করার অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে কোনকাজ সুষ্ঠরূপে সম্পন্ন করা সম্ভবা না বলে জ্যেষ্ঠ নেতাদের অভিমত।
আনোয়ার এইচ খোকনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কপি নিম্নে সংযুক্ত করা হলো: