প্রত্যাশার একুশ- মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক
আজ থেকে পথচলা শুরু নতুন একটি বছরের। উৎসবমুখর নানা আনুষ্ঠানিকতায় বরণ করা হবে ইংরেজি নববর্ষ ২০২১ সাল। নতুন বছর মানেই নতুন নতুন পরিকল্পনা। আগামী দিন নতুন করে সাজানো। সব ব্যর্থতা ও প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে জীবন সাজাতে হবে নতুন করে। ব্যর্থ হলেই থেমে যেতে হবে-এমনটা ভাবা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়, কারণ ব্যর্থতাই তো সফলতার শিক্ষা। জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে গেলে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।
২০২০ সালের সূচনাটা বাংলাদেশসহ বিশ্বের জন্য ছিল একটু ভিন্ন মেজাজে, করোনার তান্ডবে অস্থিরতার মধ্যেই কেটে গেল ২০২০ সাল। শরীর শিউরে ওঠা খবর শুনতে শুনতে ভয়ের রাজ্যে ঢুকে গেছে মন। ক্ষুদ্র একটি ভাইরাসের কাছে অসহায় ছিল পুরো পৃথিবী। বিশ্বজুড়ে অভাবনীয় সংক্রমণে জিম্মি ছিল গোটা দেশ। মানুষ ছিল অনেক অসহায়। শহর থেকে গ্রাম, দেশ থেকে মহাদেশ শুধু একাকীত্বের হাহাকার। কোথাও ছিল না কোলাহল। করোনা নামক এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে থামিয়ে দিয়েছিল সমস্ত পৃথিবী। উন্নত, অনুন্নত সব দেশ-মহাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে যায়। ইতিহাসে দুর্ভিক্ষ, মহামারি, হিংস্রতা-যুদ্ধ আর্থসামাজিক ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা সুস্পষ্ট ছিল। এছাড়াও ২০২০ সালে দেশের মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে ডেগুজ্বর, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও গুজবে মানুষ পিটিয়ে হত্যা করার মতো ঘটনা। দেশ-বিদেশে আরও হাজারো ঘটনা ঘটেছে, তার প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনে, রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে। ঘটনাবহুল সে বছরটি পেরিয়ে আমরা পা দিয়েছি একটি নতুন বছর ২০২১ সালে। কে জানে নতুন বছরের অনাগত দিনগুলো কত রহস্য আর রোমাঞ্চ লুকিয়ে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে!
২০২০-এর শেষ দিকে মহামারী করোনার সাথে জেঁকে বসেছিল প্রচন্ড শীত, মেঘলা আকাশ, কুয়াশার চাদরে ঢাকা সূর্য। আবার একেবারে শেষ দিকে ফের আবহাওয়ার আনুকূল্য। শীতের দাপট কিছুটা কমলো, হেসে উঠল রবি। প্রাকৃতির এই আচরণ কি একটি বছরকে বিদায় দেওয়ার বিরহ আর আরেকটি বছরকে গ্রহণ করার আনন্দের বহিঃপ্রকাশ! যে বছর বিদায় নিয়েছে সেখানে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি যাই হোক না কেন তা এখন শুধুই অতীত। ২০২০ সালের পাওয়া আর না পাওয়ার হিসাব মেলাতে হবে, তবে তারচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নতুন সাল একুশ’কে আরও বেশি কাজে লাগানোর প্রত্যয় নেওয়ার। ২০২১ সালে আমাদের সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটাই থাকবে যে, দেশের উন্নয়নে সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে দেশকে নতুন রূপ দান করা; সেই সঙ্গে সব অপশক্তি কঠোরহস্তে দমন করা। তরুণ’কে সামনের সারিতে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণ’রাই পারবে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তৈরি করতে। সৃষ্টিকর্তার দয়ায় মানুষের মনে জাগ্রত হোক বিবেকবোধ। প্রতিটি পর্যায়ে সুস্থতা পাক পৃথিবী, দেশ ও সমাজ।
একুশ সাল আগমন আমাদের মনের মধ্যে উদ্দীপনা বিরাজ করছে, কিন্তু ২০২০ সালে যা আমাদের ক্ষতি করেছে তা একে অপরের কষ্টে হাতে হাত রেখে, পায়ে পা মিলিয়ে সহযোগিতা করা, ভালোবেসে জড়িয়ে নেয়া। অপর দিকে হাহাকার আর বীভৎসতার মধ্যে কেটেছে অনেকের দিন; বিশেষ করে অনেকে হারিয়েছেন তার আপন স্বজন। করোনা ভীতির পুরো সময়টায় অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রতারকদের কারসাজিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছিল বার বার। এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে আমাদের’কে বেরিয়ে আসতে হবে। জীবনকে নতুন ছন্দে আঁকতে হবে, নতুন কৌশলে তৈরি করতে হবে। অর্থনীতিতে মন্দা ও মহামন্দা এর আগেও এসেছে। আমাদের সবার জীবনে একটাই লক্ষ্য থাকা উচিত, কীভাবে জীবনকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যায়, তার সব কাজ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা। দীর্ঘ সময় অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক মহামন্দার কারণে মহাবেকারত্ব, মহামারি, অবশেষে পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তারপরও অতীতে ঘটে যাওয়া সব সফলতা বা ব্যর্থতাকে বিদায় জানিয়ে সফলতা আরও দীর্ঘায়িত করার জোর প্রচেষ্টা করে অধীর আগ্রহে করোনা মুক্ত একুশ সালের প্রত্যাশা।