ওয়াশিংটনজুড়ে পুলিশ, বাইডেনের শপথ গ্রহণ পর্যন্ত কড়া নজরে ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে কারফিউ চলছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে পুরো নগরী পুলিশ আর ন্যাশনাল গার্ডের লোকজন ঘিরে রেখেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপসারণের জন্য অভিশংসন প্রস্তাবের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের আগ পর্যন্ত কড়া নজরে রাখা হচ্ছে ট্রাম্পকে।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির রাজপথ এখন শান্ত। পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি।
আশপাশের ছয়টি রাজ্য থেকে ন্যাশনাল গার্ড তলব করা হয়েছে। প্রতি সাত ফুট পরপর ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা ক্যাপিটল হিলের স্থাপনা ঘিরে রেখেছেন।
মার্কিন সংবিধানের ২৫ তম সংশোধনী চালু করে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালনে ব্যর্থ ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়েছে। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এবং সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলের নেতা চার্লস শুমার এই আহ্বান জানিয়েছেন। সংবিধানের এই প্রক্রিয়ার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রশাসনের আরও কমপক্ষে আটজনকে এগিয়ে আসতে হবে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার আমেরিকার সর্বত্র মানুষের মধ্যে একধরনের স্বস্তি দেখা গেছে। ৬ জানুয়ারির ঘটনাকে আমেরিকার গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি কালো দিন বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ একবাক্যে বলেছেন, নানা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আমেরিকার গণতন্ত্র আজ এ পর্যায়ে এসেছে। গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার পক্ষে মত দেননি কেউই। রিপাবলিকান দলের অনেক সমর্থকও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
সামনের কয়েক দিন আর কোনো অঘটন যাতে না ঘটতে পারে, সে জন্য আমেরিকায় ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। ট্রাম্পের সঙ্গে কার্যত এখন কেউ নেই। ৬ জানুয়ারি সহিংসতার জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে। এ তদন্তে উসকানিদাতা হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টা করছেন। তবে আইন বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের হাতে কোনো কিছু নিয়েই আর সময় নেই। তাঁর পরিণতি দেখার অপেক্ষায় এখন সবাই।
স্থানীয় সময় বুধবার সকাল থেকে প্রতিনিধি পরিষদের চারজন সদস্য ডেভিড সিসিলিন, টেড লিউ, ইলহান ওমর ও আয়ানা প্রেসলি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসনের জন্য খসড়া তৈরি করেছেন।
অভিশংসনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুই দফা অভিযোগ আনা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস। অন্য অভিযোগ হচ্ছে, ৬ জানুয়ারি রাজধানীতে সহিংসতাকে উসকানি দেওয়া।
টানা কয়েক দিন কংগ্রেসকে ক্লান্তিহীন কাজ করতে হয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার আগে কংগ্রেসের আর কোনো অধিবেশন নেই। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কংগ্রেস ও সিনেটের মধ্যে দিয়ে ট্রাম্পকে অভিশংসন প্রস্তাব পাসের খুব বেশি সুযোগ নেই।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার ডাকে রিপাবলিকান দলের আইনপ্রণেতারাও যোগ দিচ্ছেন। এর আগে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, তিন দিন আগে আইনপ্রণেতারা সংবিধানের নামে শপথ নিয়েছেন। এই শপথ নেওয়ার পরও যাঁরা ট্রাম্পের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের কঠোর সমালোচনা করেছেন স্পিকার পেলোসি। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যাডাম কিনজিনগার সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী অনুযায়ী ট্রাম্পকে ক্ষমতাহীন ঘোষণা করতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রিপাবলিকান এই আইনপ্রণেতা বলেছেন, ট্রাম্পই এসব ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য দায়ী। ট্রাম্পকে দায়িত্ব পালনের জন্য অযোগ্য উল্লেখ করে তাঁকে সব নির্বাহী দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সরে দাঁড়াতে হবে।
শুধু বুধবারের রাতের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬৮ জনসহ ৮০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ক্যাপিটল পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র একজন ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দা। ট্রাম্পের আহ্বানে আমেরিকার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকজনের সমাবেশ ঘটেছিল। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চারজন নিহত হওয়া এবং ব্যাপক ভাঙচুর নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ক্যাপিটল হিলের ঘটনার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ক্ষমতা থেকে না সরা পর্যন্ত ট্রাম্পের ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টুইটার ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ১২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি কেলি মেকনানি বলেছেন, ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই বলছেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর সে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির পর আমেরিকা নতুন চেতনায় আবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।