উন্নয়নশিল দেশের স্বীকৃতি পেতে পরীক্ষায় নামছে বাংলাদেশ!
মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ এমন খবরে চাউর হয়েছিল চারপাশ। কিন্তু আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মেলেনি তখনও। অল্প উন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত স্বীকৃতি পেতে আজ ১২ জানুয়ারি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)’র মূল্যায়ন পরীক্ষায় বৈঠকে বাংলাদেশ।
সন্ধ্যায় ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠেয় সিডিপি’র সাব-গ্রুপের ওই পরীক্ষায় যৌথভাবে বাংলাদেশ সরকারের অন্তত ১০জন সচিব অংশ নিচ্ছেন। তারা দেশের উন্নতির প্রশ্নে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরবেন। সেখানে উত্থাপিত জাতিসংঘ টিমের বিভিন্ন প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসার জবাব দেবেন। একই সঙ্গে কেন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতির জন্য উপযুক্ত? তার পক্ষে অকাট্য যুক্তি তুলে ধরবেন। নিউইয়র্ক ও ঢাকার একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জাতিসংঘের এক্সপার্ট গ্রুপের রিভিউ মিটিং এবং বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানিয়েছে, বাংলাদেশের উন্নতি বিষয়ে সরকারের তরফে সচিবগণ আজ যে বক্তব্য, যুক্তি এবং ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিবেন তা আগামী একমাস ধরে সিভিল সোসাইটি এবং ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তরসহ বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে ক্রসচেক হবে। বাংলাদেশ বিষয়ক প্রাপ্ত সরকারি ও বেসরকারি রিপোর্টগুলোর মূল্যায়নে একটি কম্প্র্রিহেনসিভ রিপোর্ট তৈরি করবে জাতিসংঘের এক্সপার্ট গ্রুপ।
যা আগামী ২২ থেকে ২৬শে ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)’র ২৩তম প্লিনারি সেশনে বিস্তর পর্যালোচনা হবে। ওই পর্যালোচনায় নির্ধারিত হবে বাংলাদেশের ভাগ্য।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি দেয়ার একমাত্র অধিকার জাতিসংঘের। প্রক্রিয়াটিও বেশ দীর্ঘ। একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে কি-না? সেই যোগ্যতা নির্ধারিত হয় দেশটির মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এই তিনটি সূচকে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে অন্তত ছয় বছর সময় লাগে। উন্নয়নশীল দেশ হতে প্রথমেই ওই তিনটি সূচকের দু’টিতে নির্ধারিত মান অর্জন করতে হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবেই সেই অর্থাৎ প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল বাংলাদেশ নয়, প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জনকারী সব রাষ্ট্রকেই ওই মান বজায় রাখা এবং তার ক্রমউন্নতির প্রমাণ দিতে হয় মধ্যমেয়াদি মূল্যায়ন পরীক্ষায়। যাতে আজ বসছে বাংলাদেশ।
প্রায় তিন বছর পরপর অনুষ্ঠেয় ওই মূল্যায়নে উন্নতির সূচকগুলোর ধারাবাহিকতা থাকলে অর্থাৎ তিনটির মধ্যে অন্তত দু’টিতে কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করলে চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সুপারিশ করে সিডিপি। সেই সুপারিশ প্রাপ্তির আরো তিন বছর পর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় দেয়া হয় উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন। ঢাকার কর্মকর্তারা আশা করছেন আজকের সিডিপি সাব-কমিটির এক্সপার্ট গ্রুপ মিটিংয়ে এসডিজি সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজের নেতৃত্বাধীন ঢাকার জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদল যথাযথভাবে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারবে। যার প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারির প্লিনারি সেশনে বাংলাদেশ চূড়ান্ত সুপারিশ পাবে এবং নিয়ম অনুযায়ী ২০২৪ সালে সাধারণ অধিবেশনে মিলবে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত স্বীকৃতি।