মহাদেবপুরে ১৭ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ পরিবেশ বিপর্যয়, নীরব প্রশাসন
কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়াই ১৭টি ইটভাটায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে এলাকার বনাঞ্চল ধংস হয়েছে। এখন যেটুকু গাছ বাকী রয়েছে সেগুলোও গিলছে ইটভাটাগুলো।
সরেজমিনে উপজেলার চাঁন্দাশ ইউনিয়নের বাগডোব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের পাশেই ফসলী জমি নষ্ট করে তৈরী করা হয়েছে বিশাল ইটভাটা।
চারিদিকে সরিষা আর আলুর আবাদ করা হয়েছে। সেসব জমির সাথে লাগোয় জায়গায় তৈরী কাঁচা ইট শুকানো হচ্ছে। ভাটায় কয়লা থাকলেও চারপাশে জমা করে রাখা হয়েছে সদ্য কাটা কয়েকশ’ মণ বিভিন্ন গাছের গুড়ি। ভাটার উপরে উঠে দেখা যায় প্রকাশ্য দিবালোকে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
সেখানে কাজ করা শ্রমিকরা জানালেন, প্রতিটি ভাটায় প্রথম আগুন জ¦ালানোর জন্য কাঠের প্রয়োজন হয়। প্রতিবার আগুন
জ্বালাতে সাতশ’ থেকে আটশ’ মণ কাঠ লাগে। জানতে চাইলে তারা জানান, কাঠ পোড়ানো যে অবৈধ তা তারা জানেন। কিন্তু মহাজন সকলকে ম্যানেজ করেই এই ভাটায় কাঠ পোড়ান। মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোকেরা ভাটা পরিদর্শনে আসলেও কোন অসুবিধা হয়না বলেও তারা জানান। এই ইটভাটাটির নাম আল আমিন ব্রিকস। মালিক মহাদেবপুর উপজেলা সদরের ইউসুফ আলী। তিনি বললেন, সকলেই কাঠ পোড়ায়। তাই তিনিও পোড়াচ্ছেন।
ইটভাটার কাছেই বাগডোব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মসজিদ, বাজার, অনেক বসতবাড়ী। ভাটার পাশ দিয়েই চলে গেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের মহাদেবপুর-ছাতড়া পাকা সড়ক। ইটভাটার জন্য সামান্য দূর থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলী জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে এনে তা দিয়েই ইট তৈরী করা হচ্ছে। প্রতিদিন মাটিবোঝাই অসংখ্য ট্রাক্টর চলাচলের ফলে সড়কটির সংস্কার কাজ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।
ভাটা সংলগ্ন জমির মালিকেরা জানালেন, প্রতিবছর ভাটার কালো ধোঁয়ায় ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। কিন্তু ভাটা মালিক এরজন্য কোন ক্ষতিপূরণ দেন না। এই ইটভাটা পরিবেশের মারাত্মক দূষণ করছে বলেও তারা জানান।
চাঁন্দাশ ইউপির সাবেক মেম্বার আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক রঞ্জু বলেন, এই ইটভাটার কোন অনুমোদন নেই। সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে চলছে এটি। তিনি অবিলম্বে এটি বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।
ওই ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুন নবী রিপন বলেন, অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। এব্যাপারে নওগাঁ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মকবুল হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মহাদেবপুরের ১৭ ইটভাটার একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। তাদের হাতে বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করতে পারেন না। অবৈধভাবে সবকিছু চলছে জেনেও তাদের কিছু করার নেই বলেও তিনি জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভাটা মালিক জানান, তারা বিভিন্ন সময় সরকারী, বেসরকারী, দলীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে থাকেন। তাই তাদের কর্মকান্ডে তেমন কোন অসুবিধা হয়না। তার মতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশী হয়। ইটভাটা সংক্রান্ত আইন কানুন সহজ করা হলে একদিকে যেমন ব্যবসায় পরিচালনা করা সহজ হবে, তেমনি সকলেই সরকারী আইন মেনে চলতে পারবেন।
জানতে চাইলে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন বলেন, ‘ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর কোন সুযোগ নেই’। খুব দ্রুত ইটভাটাগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলেও তিনি জানান।