পটুয়াখালী জেলা বিএনপির স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আশ্রাফ আলী হাওলাদার!
পিবিসি নিউজ: রক্তের দাগ শুকানোর আগেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক আশ্রাফ আলী হাওলাদার। গত ২১শে অক্টবর ২০২২, মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে পটুয়াখালী জেলা বিএনপি নেতা মোস্তাক আহাম্মেদ পিনুর ষড়যন্ত্রে দলীয় পদ থেকে বাদ পরে গেছেন আশরাফ আলী হাওলাদার। দলের দুর্নাম হতে পারে ভেবে নির্বাচিত নতুন কমিটির প্রতি কোন প্রকার আক্রোশ না দেখিয়ে বরং নব নির্বাচিতদের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তিনি। নতুন কমিটিতে শাহাবুদ্দিন মুন্সি নান্নুকে সভাপতি ও জাহাঙ্গীর ফরাজীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
তবে আজ রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে ষড়যন্ত্রের সকল মুখোশ উম্মোচন করে দিয়েছেন আশ্রাফ আলী হাওলাদার। স্ট্যাটাসটি দেখে সর্বস্তরের জনগণের মাঝে রাগ ও ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। দিনে বিএনপি ও রাতে আওয়ামীলীগ মুখোশধারী সাবেক পৌরমেয়র মোস্তাক আহম্মেদ পিনুর প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে পড়েছে মির্জাগঞ্জের সর্বত্র। বিএনপি আওয়ামীলীগ সহ সর্বস্তরের জনগণের মাঝেই পিনুর প্রতি ধিক্কার এসে গেছে। সকলেই ছিঃ ছিঃ করছেন।
ফেইজবুকে জনাব আশরাফ আলী হাওলাদারের দেয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দিলাম:
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
আস্সালামু আলাইকুম, গত ২১/১০/২০২২ ইং তারিখ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মির্জাগঞ্জ উপজেলা শাখার দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন সকলের প্রচেষ্টায় সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
দ্বিতীয় অধিবেশনে ৩০ জন কাউন্সিলর ভোট প্রদান করেন। ব্যালট দেওয়া হয়েছে দুইটি, একটিতে লেখা সভাপতি অন্যটিতে সাধারণ সম্পাদক। নিয়মানুযায়ী সভাপতির ব্যালট উপরে এবং সাধারণ সম্পাদকের ব্যালট নিচে থাকে কিন্তু সুপরিকল্পিত ভাবে সাধারণ সম্পাদকের ব্যালট উপরে দিয়ে সভাপতির ব্যালট নীচে দিয়ে পিন আপ করে কাউন্সিলরদের দেওয়া হয়। একজন কাউন্সিলর সভাপতির ব্যালট উপরে মনে করে আমার নাম লিখে দেয় এবং অন্যটায় পিন্টু শিকদারের নাম লিখে দেয়। যেহেতু আশ্রাফ আলী নামে কোন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলোনা সুতরাং ভোটটি আমার পক্ষে বৈধ। নেতৃবৃন্দ আমার ঐ ভোট টাকে বাতিল করে যাহা আইনসম্মত নয়। ঐ এক ভোটের ব্যবধানে আমাকে পরাজিত ঘোষণা করে। কর্তৃপক্ষের ভুল হলেও দলের ঐক্যের স্বার্থে আমি মেনে নিয়েছি।
আহবায়ক হওয়ার পরে উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ নিয়ে সরাসরি ভোটে শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন করি। এতে আমার নিজস্ব অনেক ত্যাগী নেতা কর্মীকে কমিটিতে যথাযথ স্থানে রাখতে পারি নাই এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
৩০ জন কাউন্সিলর ভোট দিয়েছেন কে আমাকে দিয়েছে বা কে দেয় নাই এটা বড় বিষয় নয়। আমি মনে করি সকলেই আমার দলের নিবেদিত ত্যাগী নেতা।
দলের স্বার্থে গনতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামীদিনের রাষ্ট্রনায়ক জনাব তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য সকলে মিলে মিশে আন্দোলন করব এবং আপনাদের পাশে থাকব ইনশআল্লাহ। সুস্থ থাকেন সকলে ভালো থাকেন সকলে। আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে বিভাগীয় গনসমাবেশে মির্জাগন্জের হাজার হাজার নেতা কর্মীর পাশে থাকব ইনশআল্লাহ।”
মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ঘটে যাওয়া এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায় –
আশরাফ আলী হাওলাদার উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পরে দলকে গুছিয়ে সকল ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনের কাজে হাত দেন। ইতোমধ্যে কেন্দ্র ঘোষিত জেলা পর্যায় বিএনপির বিক্ষোভ করতে গিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় নেতাকর্মী নিয়ে মারাত্বকভাবে আহত হয়েছিলেন তিনি যেই রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি বলে অনেকে মনে করছেন। সেদিনের হামলায় শতাধিক কর্মীসহ মারাত্বক আহত হয়েছিলেন আশ্রাফ আলী হাওলাদার।
এদিকে সাবেক পৌরমেয়র মোস্তাক আহাম্মেদ পিনু জেলা কমিটির আহ্বায়ক কিংবা সদস্য সচিব না হয়েও মির্জাগঞ্জ উপজেলার সকল ইউনিয়ন বিএনপিতে তার পছন্দের নেতা কিংবা কমিটি এপ্রুভ করতে আশরাফ আলী হাওলাদারকে প্রেশার দিতে থাকেন। উদ্দেশ্য আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিশ্চিত করা। তিনি কিংবা বর্তমান জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার যে কারো জন্যই পটুয়াখালী -১ আসনের মনোনয়ন নিশ্চিত করা যায়।
পটুয়াখালী -১ আসনের সাবেক এমপি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী যেন কোন প্রকার নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা। মূলত: দলাদলির উপরে উঠে সাবলীল মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপি গঠন করতে চাওয়া নিয়ে দুই নেতার মধ্যে দূরত্বের তৈরী হয়েছিল এবং অবশেষে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আশরাফ আলী হাওলাদারকে পদবঞ্চিত করা হলো।
যদিও পটুয়াখালী জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কোন আন্দোলনেই দেখা যায়না মোস্তাক আহাম্মেদ পিনুকে। রাতে আওয়ামীলীগ দিনে বিএনপি এমন হাইব্রিড নেতা মোস্তাক আহাম্মেদ পিনুর বিরুদ্ধে জেলা বিএনপির রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। আস্তে আস্তে সব কিছুই উম্মোচন করা হবে।