গণসমাবেশ সামনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পুলিশি অভিযান
পিবিসি নিউজঃ ফরিদপুর ও সিলেটে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি অভিযান চালাচ্ছে ফ্যাসিবাদী সরকার। এই দুই বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ সামনে রেখে বিএনপির ওপর চাপ বাড়াতেই এমন অভিযান চালানো হচ্ছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। গণসমাবেশের দুই দিন আগে ফরিদপুরে নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিলেটে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে পুলিশ। গণ সমাবেশের প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ করছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ফরিদপুরে বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। পাশাপাশি পুলিশ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ করছে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরকান্দায় আটজন ও ফরিদপুরে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফরিদপুরের বিএনপি নেতা মিনান, পংকজ চেয়ারম্যান, লুৎফর, শাজাহান ও বাবুলের বাড়িতে হামলা হয়েছে। ছাত্রদল নেতা মোনায়েমকে থানায় আটকে রাখা হয়েছে।
ডা. জাহিদ বলেন, কতজনকে সরকার গ্রেপ্তার করবে? দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। একজনকে গ্রেপ্তার করলে, একশজন জেগে উঠবে। রহিম, নূরে আলম, শাওনকে হত্যা করে সরকার বিএনপিকে থামাতে পারেনি। বরং সমাবেশ গুলোতে গণমানুষের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা বহু চেষ্টা করছে গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে। বরিশালের মানুষকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। তবে পদ্মা পাড়ের মানুষকে তারা কোনভাবেই দাবিয়ে রাখতে পারবে না। কোনো বাধা ফরিদপুরের এই গণসমাবেশকে আটকাতে পারবে না। কোনো অবস্থাতেই কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সেজন্য আমরা সকলে সতর্ক রয়েছি। আমরা চাই অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে এই গণসমাবেশ সফল হোক। গণসমাবেশকে সফল করার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা সর্বত্রই জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা পাওয়া গেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, সারা দেশে আজ গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বিএনপি নেতাদের বাড়িতে অভিযানের নামে হয়রানি, দুর্ব্যবহার করছে। নগরকান্দায় সাতজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ফরিদপুরে অন্তত ছয়জন নেতার বাড়িতে অভিযানের নামে হয়রানি করেছে পুলিশ। নেতাদের বাড়িতে অভিযান করে নারীদের সঙ্গে ন্যক্কারজনক আচরণ করেছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া বলেন, মঙ্গলবার আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। এছাড়া যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল নিয়ে মহল্লায় মহল্লায় মহড়া দিয়ে ভীতির সৃষ্টি করছে। আমরা এসব কার্যকলাপের নিন্দা জানাই।
গণসমাবেশস্থল পরিদর্শনকালে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ১২ই নভেম্বর শনিবার সকাল ১১টা থেকে কোমরপুর স্কুল মাঠে গণসমাবেশ শুরু করা হবে। তবে যানবাহনে বাধাসহ সরকারের তরফ থেকে নানাভাবে বিঘ্ন সৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার থেকেই নেতাকর্মীরা গণসমাবেশস্থলে অবস্থান গ্রহণ করবেন। সরকারের বাধা সৃষ্টির কারণে এই গণসমাবেশ ১০ই নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে শনিবার পর্যন্ত তিনদিন অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশের মাঠ থেকে ফরিদপুর মহানগরী পর্যন্ত পৌঁছে যাবে এই জনসমুদ্র।
শহরের উপকণ্ঠে কোমরপুরের আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউট মাঠে জনসভাস্থল প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। বুধবার সেখানে মঞ্চ ও আলোকসজ্জার কাজ চলছে। এছাড়া ব্যানার ও ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে সমাবেশের আশেপাশের স্থান। সকাল থেকেই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে কাজের অগ্রগতি দেখতে যাচ্ছেন।
সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সমাবেশ সফল করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। গণসমাবেশে লক্ষাধিক লোক যোগ দেবেন বলে তাদের আশা।
এদিকে, বিএনপির গণসমাবেশের আগের দিন শুক্রবার শহরে মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে শহরে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া গণসমাবেশের একদিন আগে শুক্রবার (১১ই নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে সমাবেশের দিন শনিবার (১২ই নভেম্বর) রাত ৮টা পর্যন্ত পরিবহণ ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইসতিয়াক আরিফ বলেন, শুক্রবার শহরে আমরা (আওয়ামী লীগ) মিছিল-সমাবেশ করব। বিএনপির সন্ত্রাস, ভাঙচুর, নৈরাজ্য ও দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিবেশ সৃষ্টির প্রতিবাদে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। শহরের শেখ রাসেল স্কয়ার থেকে শুক্রবার বেলা ৩টায় মিছিল শুরু হয়ে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে মিছিল শেষ হবে। সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দেবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা শুক্রবার সমাবেশ করব। আর বিএনপির সমাবেশ তো একদিন পর। আমাদের মিছিল মূলত শান্তির বার্তা দেওয়ার জন্য। বিএনপির নৈরাজ্যের কারণে জনমনে যাতে ভীতি না হয় সেজন্যই মিছিল করা হবে।
বুধবার বিকেলে ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া হয়েছে। বিকেল চারটার দিকে মহড়া শহরের শেখ রাসেল স্কয়ার থেকে শুরু হয়ে ভাঙ্গা রাস্তার মোড়, রাজবাড়ি রাস্তার মোড় হয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ধরে কোমরপুরে আবদুল আজিজ ইন্সটিটিউশন এলাকা হয়ে ধুলদী পর্যন্ত যায়। পরে মোটরসাইকেলের মহড়া শহরের কাঠপট্টি এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দিয়ে ঝিলটুলী হয়ে আবার শেখ রাসেল স্কয়ারে এসে শেষ হয়।
জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরিফুল হাসান বলেন, নির্ধারিত কর্মসূচি হিসেবে এ মোটরসাইকেল মহড়া হয়েছে। আমরা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থনে স্লোগান দিয়েছি। গণসমাবেশবিরোধী কিছু করিনি।
এদিকে ১৯ নভেম্বর গণসমাবেশকে সামনে রেখে সিলেটেও বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে।