স্বাধীনতার ৫১ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি : মোশাররফ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৪ বছর ধরে গায়ের জোরে দেশ শাসন করছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, স্বাধীনতার ৫১ বছরেও আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। অথচ গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার, সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পাকিস্তানি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে একাত্তরে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর প্রথম যারা ক্ষমতায় ছিল তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট করেছে। সবার অধিকার কেড়ে নিয়ে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। রক্ষীবাহিনী গঠন করে ২০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। সেই আওয়ামী লীগ আবারো দেশে ১৪ বছর ধরে গায়ের জোরে দেশ শাসন করছে। ২০১৪ সালে বিনাভোটে সংসদ গঠন করেছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতেই ডাকাতি করেছে। আবারো একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করছে তারা।
তিনি বলেন, বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। আইনজীবী, সাংবাদিক রাজনীতিবিদ সবাইকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বানোয়াট মামলায় সাজা দিয়ে বন্দী করেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে থাকতে বাধ্য করেছে। এই সরকার সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ। তাদের অর্থ পাচার এতো বেশি যে দেশের অর্থনীতি এখন ধ্বংসের কিনারে। আজকে যারা গণতন্ত্র, অর্থনীতি, সুবিচার নষ্ট করেছে তাদেরকে দেশের জনগণ আর দেখতে চান না। সুতরাং সকলের দায়িত্ব হচ্ছে এই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। তা না হলে কারো রেহাই নেই।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আগামীতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের অধীনে বিএনপি সরকার গঠন করলে দেশ কিভাবে পরিচালিত হবে সেই রুপরেখা আমরা ঘোষণা করবো। আসুন সবাই বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রতিষ্ঠার শপথ নিই।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা গর্বিত, আমাদের দেশে এমন মানুষ ছিলেন যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। কিন্তু আমরা লজ্জিত যারা জীবন দিয়েছে তাদের জীবনের মূল্য আমরা পরিশোধ করতে পারিনি। তারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছিলেন। সেই গণতন্ত্রকে বারবার হত্যা করা হয়েছে। যে দেশের জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার থাকে না। সেখানে গণতন্ত্র আছে বলা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, আজকে দেশের মানুষ শান্তিতেও নাই, স্বস্তি তেও নাই। সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়নি। শোষণ-বঞ্চনা পর্যায়ক্রমে বেড়ে চলেছে। সরকারের সুযোগ নিয়ে, শুধু কোভিডএর মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার নতুন কোটিপতি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে প্রায় চার কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। তাহলে এ দেশের সাম্য কোথায়?
ড আব্দুল মঈন খান বলেন, ১১ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের কথা ছিল। সেদিন আত্মসমর্পণের করা হলে আজকের এই দিনে ঘটনা ঘটত না। আজকের বাংলাদেশের ৫১ বছর পর মনে হয় এ ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান সরকার তাদের মত মরিয়া হয়ে গেছে। কিন্তু মানুষের কেড়ে নিতে কেউ পারে না পারবে না। বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যাবস্থাকে ধ্যংস করে দিয়েছে। আজকের এই শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। এক দলীয় শাসন কেউ মেনে নেয়নি। এটা মেনে নেয় না।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, যে অধিকার নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু সেই অধিকার আবার হরণ করা হয়েছে। দেশের বর্তমান বুদ্ধিজীবীরা তা নিয়ে কথা বলেন না। তারা পদ-পদবি নিয়ে বসে গেছে। আর বই লিখে না। বর্তমান সরকার তাদের পদ- পদবি দিয়ে দূরে সরে রেখেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুল ইসলাম খান আলিম প্রমুখ।