Bangladesh Democracy seminar under attack at Columbia University.
গণতন্ত্রের অবর্তমানে উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে
নিউ ইয়র্ক থেকে সংবাদদাতা
৩০ মার্চ ২০১৭,বৃহস্পতিবার, ১৩:৪৩
বাংলাদেশে প্রতিযোগিতাপূর্ণ গণতান্ত্রিক-ব্যবস্থার অবর্তমানে ইসলামি উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশীয়বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। গণতন্ত্রের অবর্তমানে সুবিধা বঞ্চিত মানুষ, উপজাতীয়দের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে বলেও মনে করেন তারা।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ক্লাব বাংলা’ এবং নিউইয়র্কের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান ‘আর্চার ব্লাড সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি’-এর যৌথ উদ্যোগে আগামী ২৯ মার্চ বুধবার ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি কনফারেন্স-২০১৭’ শীর্ষক এক বিশেষ সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ও ‘আর্চার ব্লাড সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি’র প্রেসিডেন্ট প্রফেসর দীনা সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লিসা কার্টিস, ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ডক্টর জয়ীতা ভট্টাচার্য্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী, মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এটর্নি শমতলী হক।
লিসা কার্টিজ বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবর্তমানে ইসলামি উগ্রবাদী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ হামলার তীব্রতা বাড়ছেই । তবে সন্ত্রাসবাদী হামলা ও ব্লগারদের উপর আক্রমণের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী দলকে দায়ী করা উগ্রবাদী ইসলামিক গোষ্ঠিকে সমাজে জায়গা করে নিতে সহযোগিতা করবে বলেও মনে করেন তিনি।
এসময় লিসা কার্টিজ আরো বলেন, বাংলাদেশ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি করেছে। তবে যদি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি না করা যায় তা হুমকির মূখে পড়বে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের ফলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ। এজন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রকে আরো বেশি মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন তিনি।
ঊাংলাদেশে মানবাধিকার প্রসঙ্গে লিসা কার্টিজ জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিষ্টার আরমান নিখোঁজ হবার ঘটনায় তার উদ্বেগের কথা জানান।
ডক্টর জয়িতা ভট্রাচার্য বলেন, বাংলাদেশে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত থাকলেও ২০১৪ সালের পর তা আগের যায়গায় ফিরে গেছে। যদিও সরকার সংবিধানের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে। তিনি আরো বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে অপর দেশে গণতন্ত্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই । যদিও ভারতে গণতন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে । বাংলাদেশের গণতন্ত্র পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে বলে মনে করেন ডক্টর জয়িতা।
মানবাধিকার নেত্রী সমতলী হক বলেন, বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত ও উপজাতীয় মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। সিলেটে চা বাগান এলাকায় বাংলাদেশের মানুষের জমি নিয়ে বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের না দিয়ে সরকার বিদেশি উদ্যোক্তা দিয়ে দিচ্ছে। সাঁওতালদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।।
বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মাধ্যমে বিরোধী মতকে দমন করা হচ্ছে জানিয়ে বক্তব্য দিতে থাকলে দর্শক সারিতে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হন সমতলী হক।
এসময় তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী মনে করে সরকার। আর এর প্রভাব পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের আবেদন নাকচ করে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এসময় তিনি কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের চার পাঁচজন প্রশ্ন না করে বক্তব্য দিতে থাকলে সঞ্চালক বক্তাদের থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে প্যানেল আলোচকদের দিকে তেড়ে যান আওয়ামী লীগ নেতারা। পরে দ্রুত প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ না করেই সেমিনারটি শেষ হয়।
উল্লেখ্য সেমিনারটি পণ্ড করতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে প্রায় চল্লিশ জন নেতাকর্মী সন্ধ্যা ৭ টা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৯টায় সেমিনার শুরু হলে সামনের সারিতে বসেন দলটির নেতারা। পক্ষান্তরে বিএনপির পক্ষে মাত্র তিনজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তারা হচ্ছেন পারভেজ সাজ্জাদ, গোলাম ফারুক শাহীন, মতিউর রহমান লিটু প্রমুখ। উল্লেখ্য সেমিনারে উপস্থিত ৬৫ জনের মধ্যে ৪২ জনই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। এসময় সরকারের পক্ষ থেকে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্সুলেটের ডেপুটি কন্সাল জেনারেল শাহিদুল ইসলাম।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘আর্চার ব্লাড সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি’র নির্বাহী পরিচালক কাউসার মুমিন। এসময় তিনি বলেন, প্যানালিস্ট হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রিয় কমিটিতে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকায় শেষ পর্যন্ত তাকে প্যানেল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে আরো ব্যাপক ভিত্তিক সেমিনারের আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।
http://m.dailynayadiganta.com/detail/news/207999