বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন >>> মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন
জাতীয় হিন্দু মহাজোট নামক সংগঠনের মহা অভিযোগ বাংলাদেশে হিন্দুরা নাকি নির্যাতনের শিকার। ২ জানুযারী ঢাকায় সাংবাদিকদেরকে ডেকে হিন্দু মহাজোট বাংলাদেশকে ইংরেজি নববর্ষের উপহার হিসেবে এই অভিযোগ পেশ করেছে।
মহা অভিযোগের তালিকা: ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে নাকি ৬৮৩টি ঘটনায় ৩১,৫০৫ জন সংখ্যালঘু (মূলত হিন্দু) নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। খুন হয়েছেন ১০৮ জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪২ জন। ৩৭৮টি পরিবারকে বাংলাদেশ ত্যাগে করা হয়েছে। ৬৪টি পরিবারকে বাংলাদেশ ত্যাগের জন্য বলা হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ছিল ২২৬টি পরিবার। ৪৩৪টি বাড়ি থেকে হিন্দুদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। হিন্দুদের ৯,৫০৭.২২ একর জমি দখল করেছে। ৭৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। ৯২টি বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। ২৭৭টি বাড়ি কিংবা মন্দির লুট হয়েছে। ২৪৬টি প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে। ১৪৮ জনকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত কিংবা ধর্মান্তরের চেষ্টা হয়েছে। ৩৮৭টি বাড়িতে হামলা হয়েছে। ৭৬ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। ‘সরকার সকল শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ইসলামীকরণ করেছে।’ ‘হিন্দু’ শিক্ষার্থীদেরকে ‘বাধ্যতামূলক ইসলাম ধর্ম পাঠ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।’ প্রশাসনে হিন্দুবিদ্বেষ চরম আকারে বিরাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে পঠি^ত বক্তব্যকে বাহ্যিকভাবে গবেষণাধর্মী মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে সবতথ্যই বানোয়াট কিংবা মিথ্যা প্রচারণার অংশ । এইসব অভিযোগই হিন্দু মহাজোটের প্রভুু ভারতের ‘র’এর নির্দেশে প্রস্তুত এবং বাংলাদেশবিরোধী মুসলিমবিরোধী সাম্প্রদায়িক মানসিকতার বহির্প্রকাশ। বাস্তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সারা বছরই আলোচনায় আসতো।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উপরের অভিযোগগুলো কতোখানি সত্য তা জানার জন্য ৩ জানুয়ারী থেকে বিভিন্ন সূত্রের সাথে যোগাযোগ করা হয়। বাংলাদেশের অন্তত ৪৩টি জেলার বিভিন্ন পেশার বেশ কিছু বাসিন্দাদের সাথে মাঝে মাঝে আমার কথা হয়। কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকদের সাথে। হিন্দু মহাজোটের অভিযোগের ব্যাপারে তাদের অনেকের সাথে কথা হয়েছে। তাদের অভিন্ন জবাব: যেসব তথ্য তথা পরিসংখ্যান হিন্দু মহাজোট সাংবাদিক সম্মেলনে পড়েছে সেগুলো বাস্তবসম্মত নয়। এগুলোর অধিকাংশই কেবল অতিরঞ্চিতই নয়, মিথ্যা প্রচারণা।
তাদের প্রশ্ন কোথায় কোন হিন্দুকে খুন করা হয়েছে, কোন মেয়েকে জোর করে মুসলমান হতে বাধ্য করা হয়েছে তেমন একটি ঘটনার সময়, তারিখ, মাস কিংবা জায়গার, এমনকি জেলার নাম পঠিত অভিযোগনামায় উল্লেখ করা হয় নি। কারা খুন করলো কিংবা জোর করে হিন্দু মেয়েকে মুসলমান করলো তাদের একজনের ঠিকানা তো দূরের কথা নামও বলা হয় নি। কোন কোন তারিখে এই সব ঘটনা ঘটেছে, তারা ঘটিয়েছে থানা/ আদালতে কোন মামলা হয়েছে কী না, সেইসব মামলার তারিখ ও নম্বর কিছুইর কোন উল্লেখ নেই।
তথ্যাভিজ্ঞমহল মনে করেন, ভারতে মুসলিমবিরোধী আইন পাশ করিয়ে নেয়ার সময় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভারতের লোকসভায় অভিযোগ করেছেন যে, বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না বলেই সিএএ (সিটিজেনশ এ্যামেন্ডমেন্ট এ্যাক্ট) পাস করা হয়েছে। এই আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতীয় মুসলমানদেরকে বিতাড়িত করে এই তিনদেশ থেকে ভারতে গমনকারী হিন্দুদেরকে নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য এই আইন জরুরী। এই আইন জনরোষের সম্মুখীন। বিরোধীদলসহ সাধারণ মানুষ, এমনকি শিক্ষার্থীরা এই আইনের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন।
এমন অবস্থায় মুসলিম-বিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক এই আইনকে জায়েজ করার জন্য অমিত শাহ’র অভিযোগ (বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতিত) যে সঠিক তা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে ভারতীয় ‘র’ হিন্দু মহাজোটকে মাঠে নামিয়েছে। তাদেরকে দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ওই অভিযোগনামা পড়ানো হয়েছে।
তথ্যাভিজ্ঞাদের এইসব অভিযোগ পুরাপুরি ভুয়া। বাংলাদেশের হিন্দুরা কোনভাবে নির্যাতিত নয়। এই সব অভিযোগ সত্যি হলে আক্রান্তদের নাম-ঠিকানা এবং এইসবের সাথে জড়িতদের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করা হতো। থানায় থানায় মামলা হতো। হিন্দুরা বাংলাদেশে এতো শক্তিশালী যে এমন শত শত অভিযোগ নয়, একটি অভিযোগ পেলেই ভারত-নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন সাথে সাথে লগুশাস্তি প্রদান করতো।
তারা বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু মহাশক্তিশালী । বাংলাদেশে সব জায়গায় সব অফিসে থানায় থানায় হিন্দুরা বসে আছে। মহাজোটের বিপুল অভিযোগের সাথে জড়িতরা শাস্তিহীন থাকবে এটা অবিশ্বাস্য। যেকোন জায়গায় হিন্দু নাম হলেই তার কাজটি আগে করে দেয়া হয়। এমনকি ডাক্তারের সাথে দেখা করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে হিন্দু কেউ আছে কী না তা ডাক্তারের লোকেরা খুঁজে খুঁজে বের করেন। পরে এসেও হিন্দুরা আগে আসা অপেক্ষাকরীদের সামনে চলে যান কিংবা তাদের জন্য পৃথক লাইন করা হয়। হিন্দুদের দেখার পর মুসলমান রোগীরা ডাক্তারের সাথে কথা বলার সুযোগ পান।
তথ্যাভিজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুরা সবচেয়ে সুবিধাভোগী সম্প্রদায়। একজন শিক্ষিত হিন্দু নারী-পুরুষ পাওয়া কঠিন হবে, যে বেকার। সচিবালয়ে যান নামফলকগুলো পড়–ন । ৯২ ভাগ মানুষের দেশে দেখুন সচিবালয়ে ওদের সংখ্যা কেমন? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকান। তাকান পুলিশ বিভাগে, কমপক্ষে থানাগুলোর দিকে। বিশ্বাস হবে না বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ অধিবাসী মুসলমান। হিন্দুদের জয়-জয়কার। তাদের দাপটে মুসলমানরা কোণঠাসা। গ্রামের চাঁড়াল-নাপিতদের নামের শেষে ‘বাবু’ শব্দ বলাটা অঘোষিত রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে অর্জিত সম্পদ হিন্দুরা প্রতিনিয়ত ভারতে পাঠিয়ে দেয়। তারা বাংলাদেশকে তাদের স্বদেশ মনে করে না। তারা অপেক্ষায় আছে কবে বাংলাদেশ ভারতের সাথে মিশে যাবে। এই লক্ষে তারা দিনরাত সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় কোন মুসলমান কি করছে সেই তথ্য নির্ধারিত ফোন নম্বরে কিংবা নিকটতম মন্দিরে পৌঁছানো তাদের দায়িত্ব। তারা ভারতের হয়ে বাংলাদেশবিরোধী কাজে লিপ্ত। বাংলাদেশ থেকে ভুয়া খবর সারা বিশ্বে প্রচার করার কাজে নিয়োজিত। হিন্দু মহাজোটসহ তাবৎ হিন্দুরা এই ধরনের দুষ্কর্মই করছে।
হিন্দু মহাজোটের অভিযোগ কেবল সরকারের বিরুদ্ধেই নয়, দেশের বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলো কতোখানি সত্যি তা খতিয়ে দেখা সরকারের দায়িত্ব। দেশের বিরুদ্ধে মানে দেশদ্রোহিতা। অথচ এর বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো হয় নি। কোন মুসলমান সরকারের সমালোচনা করলেই সারা দেশব্যাপী মানহানির মামলা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়। একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা থানায় থানায়। দেশের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ করার পরেও হিন্দু মহাজোটের নায়করা নিরাপদই আছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয় নি।
কেবল সাংবাদিক সম্মেলন কিংবা বিবৃতি প্রকাশের মধ্যেই এদের দুষ্কর্ম সীমিত নয়। এরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাটক কিংবা চলচ্চিত্রের মতো হিন্দুবিরোধী ভুয়া দাঙ্গা-হাঙ্গামা, খুন, জখম, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, এমনকি ধর্ষণের ভূয়া ঘটনার ভিডিও করে এবং সেগুলো সারা বিশ্বে, বিশেষত প্রাশ্চাত্যের দেশগুলোর সরকার, বিভিন্ন মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে প্রেরণ করে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন (২০০১-২০০৫) এই ধরনের ভুয়া ভিডিও তৈরির সময় এদেরকে হাতেনাতে ধরা হয়। মানবাধিকার সংস্থার নামে কিছু হিন্দু ফ্রান্স থেকে এসে বরিশালের একটি স্কুলে খুনের দৃশ্য চিত্রায়িত করার সময় ধরা পড়ে। একজন হিন্দুকে মৃত মানুষের মতো শুয়ানো অবস্থায় তার ধুতি ও গলায় লাল রং দিয়ে এমনভাবে দেখানো হয় যে, তাকে মুসলমানরা খুন করেছে। তাদের কাছ থেকে বেশ ক’টি ভিডিওটি উদ্ধার করা হয়, যেগুলো ধর্ষণের (মক্) ভিডিও ছিল। এই ধরনের হাজার হাজার পেপার কাটিং, প্রচারপত্র, ছবি, ভিডিও ভারতীয় চররা সারা বিশ্বের সবদেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে হয়। এইখানেই শেষ নয় এইসব বানানো কাহিনী রেফারেন্স হিসেবে তথাকথিত গবেষণাপত্রে কিংবা প্রতিবেদনেও ব্যবহৃত হয়। এদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে বহির্বিশ্বের অনেকেই বাংলাদেশকে বাংলাদেশের মানুষকে সাম্প্রদায়িক মনে করেন।
অনেকেই মনে করেন এই ধরনের অপকর্ম দেশদ্রোহিতা হলেও হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা শেখ হাসিনা সরকারের নেই? হয়তো নেই। কারণ ওদের পিছনের শক্তি ভারত। ভারতের সাথে শেখ হাসিনাদের যে সম্পর্ক তারচেয়ে অনেক বেশি গভীর ভারতের সাথে হিন্দু সংগঠনগুলোর সম্পর্ক। শেখ হাসিনার সাথে ভারতের সম্পর্ক স্বার্থের স্বার্থের আর হিন্দুদের সম্পর্ক আত্মার, ধর্মের। শেখ হাসিনার সাথে ভারতের সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে কিন্তু হিন্দুদের সাথে নয়। হিন্দুরা বাংলাদেশকে ভারতের দখলে নেয়ার কাজে নিয়োজিত, যা ভারত সরকারের ঘোষিত নীতি। তাই ভারতের চাপেই (সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত)’কে মন্ত্রীত্ব হতে বাদ দেয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রীসভায় ফিরিয়ে আনা হয়। সু. সে. গু. আমৃত্যু এই পদে ছিলেন। কারণ সু. সে. গু’র পিছনের শক্তিও ছিল ভারত। দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হবার পর এই সু. সে. গু’র নেতৃত্বে একদল হিন্দু নতুন দিল্লীতে গিয়ে তাদের প্রভু মোদির কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ করার পরেও শেখ হাসিনা সু. সে. গু’কে একটি কথাও বলার সাহস দেখান নি। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর ঢাকায় হিন্দুরা আনন্দ-উল্লাস করেছে। হিন্দু মহাজোট নেতাদের যে কিছুই হবে না, তা নিশ্চিত বলেই তারা সাংবাদিকদেরকে ডেকে বাংলাদেশবিরোধী এমন বানানো অভিযোগ করার সাহস পেয়েছে যা ভবিষ্যতেও চলবে।
সরকার এই অভিযোগের জঘন্য ক্ষতিকর দিকগুলো অবশ্যই জানে। অথচ এই ধরনের প্রচারণা বন্দে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। বছরের পর বছর এমন মিথ্যা অভিযোগ ও প্রচারনা চলছে। তাহলে তাদের অভিযোগগুলো কী সত্যি? সত্যি হলে এগুলোর অনুঘটকদেরকে ধরা হয়েছি কী? বিচার হয়েছে কী? কেন হয় নি? অভিযোগ সত্যি হলে অপরাধীদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। আর অভিযোগ সত্যি না হলে হিন্দু মহাজোটের কর্মকর্তাসহ যারা এই ধরনের প্রচারণায় লিপ্ত তাদের বিচার করতে হবে।
কথায় কথায় মুসলমানদেরকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে সারা দুনিয়ায় প্রচার করার জন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক নিয়োজিত হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কিংবা হিন্দু মহাজোটসহ তাবৎ হিন্দুরা বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে প্রচার করে। কিন্তু ১৯৭১ সাল, এমনকি ১৯৪৭ সালের পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাবেক পূর্ব পাকিস্তান এবং আজকের বাংলাদেশে কয়জন হিন্দু কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য নিহত হয়েছে হিন্দু মহাজোট তো বটেই পারলে ভারত সরকার সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ করুক। একই সাথে প্রকাশ করুক তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে মুসলমানদের অবস্থা অবস্থা । তাদের অবস্থা কতো নাজুক, তারা কেমন বিপন্ন তা’ প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমে আসে। মুসলমানরা সেইসব দুঃসহ কাহিনী তৈরি করে না। সেইসব ফিরিস্তি দিতে গেলে বিশালাকারের বই হয়ে যাবে। অথচ দ্ইু হাজার মুসলমানকে হত্যাকারী মোদি এবং তার সহশিল্পীরা বলে বেড়ায় উপমহাদেশে তিনটি মুসলিম দেশেই হিন্দুরা নির্যাতিত। মোদি বলুক ভারতে এই পর্যন্ত কতো হাজার মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা হয়েছে? কতো লাখ মুসলমান নিহত ও আহত হয়েছেন? মুসলমানদের কতো হাজার বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ধ্বংস হয়েছে? কতো হাজার মসজিদ, কবরস্থান, এতিমখানা, মাদ্রাসা, খান্কাহ হিন্দুরা দখল করেছে? মুসলমানদের ফেলে আসা কতো লাখ একর জমি, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিন্দুরা দখল করেছে? কতোজন মুসলমান তাদের পরিবারকে দুইভাগ করে একভাগ ভারতে অপরভাগ বাংলাদেশে কিংবা পাকিস্তানে অথবা আফগানিস্তানে রেখেছে? ভারতীয় মুসলমানদের প্রতিমাসের আয় তো ওই তিনদেশের কোনটিতেই পাঠানো হচ্ছে?
আমি মোদিসহ সব হিন্দুকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি সাহস থাকলে এইসবের পরিসংখ্যান প্রকাশ করুন। দুনিয়াবাসী দেখুক: কোন দেশ সাম্প্রদায়িক? কোন দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অধিক সুযোগ-সুবিধা ও স্বাধীনতা ভোগ করে? জীবনের নিরাপত্তা ভোগ করে? চাকরিসহ সব ধরনের সুবিধা ভোগ করছে? কোন দেশের সংখ্যালগুরা নির্যাতিত, বিপন্ন, অবহেলিত, সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত?
আরো কিছু প্রশ্ন করতে চাই কোন দেশের সংখ্যালঘুরা নিজ দেশের পরিবর্তে অন্যদেশকে ভালোবাসে? মিথ্যা সাজানো অভিযোগ এনে নিজ দেশের মান-ইজ্জত ডুবায়? এমন সংখ্যালঘু ভারতে পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশে রয়েছে। শতকরা পাঁচজন হিন্দুও নেই যারা বাংলাদেশকে তাদের স্বদেশ মনে করে না। তাদের কাছে ভারতই হলো তাদের দেশ। এরা ভারতের বাংলাদেশবিরোধী কোন আগ্রাসী দুষ্কর্মের প্রতিবাদ করে না। এমনকি এনআরসি ও সিএএ’এর চরম বাংলাদেশবিরোধী আইনকে এরা স্বাগত জানায়। জাতীয় হিন্দু মহাজোটের ফেসবুকে একটি লেখা দেখে আমি অবাক হয়েছি।
রাহুল দাস নামক জনৈক হিন্দু জাতীয় হিন্দু মহাজোটের ফেসবুকে লিখেছেন: “ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে জনসমর্থন যাচাইয়ের জন্য Z news একটা টোল ফ্রি নাম্বারে ফোন দিতে বলছে, যাতে তারা দেখাতে পারে যে কত ভাগ মানুষ এই নতুন আইন সমর্থন করেন।
“তাই সমস্ত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানরা এই দুইটা নাম্বারে (০০৯১৭৮৩৪৯৯৮৯৯৮/ ০০৯১৭৮৩৬৮০০৫০০) কল করুন, আপনার একটাকাও খরচ হবে না।”
তাহলে বুঝুন হিন্দু মহাজোটরা তথা হিন্দুরা বাংলাদেশে বসে কার হয়ে কাজ করে ? এরা মুসলমান, এমনকি বাংলাদেশের শত্রু না বন্ধু? এই ধরনের স্ট্যাটাস হিন্দু মহাজোট কীভাবে তাদের ফেসবুকে রাখে? এবং এই সংগঠন কতোখানি মুসলিমবিদ্বেষী?
এরা আরএসএস’এর চেলা – জঘন্য সাম্প্রদায়িক। এদের পতাকা ও প্রতীক দেখুন। আরএসএস এবং হিন্দু মহাজোটের পতাকা দেখুন। কেমন অপূর্ব মিল। গেরুয়া কালার মাঝখানে কিছুটা ফাটা। আরএসএস কী চায়, কী তাদের লক্ষ্য তা’ অনেকেরই জানা আছে। হিন্দু মহাজোট হলো আর এস এস’এর বাংলাদেশী সংস্করণ বা কার্বনকপি। এদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্থানবিহীন অখন্ড ভারত। তাই স্বদেশে-বিদেশে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারনা।
বিভিন্ন সংগঠনের নামে এরা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের স্বার্থ ও অস্তিত্ববিরোধী মিথ্যাচার করে বাংলাদেশকে সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার চক্রান্তের অংশ। এরা বাংলাদেশে বসে ভারতের গান গায়। ভারতকে তাদের স্বদেশ মনে করে। প্রায় প্রতিটি হিন্দু পরিবার দ্বিখন্ডিত। একভাগ বাংলাদেশে, আরেক ভাগ ভারতে। প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন শেখ হাসিনা হিন্দুদের ব্যাপারে প্রকাশ্যে বলেছিলেন: ”হিন্দুদের এক ঠ্যাং বাংলাদেশে, আরেক ঠ্যাং ভারতে।” বাংলাদেশে আয় করে তা ভারতে পাঠিয়ে দেয়। ভারতে সম্পদ গড়ে। বাংলাদেশ যতোদিন স্বাধীন থাকবে ততোদিন এইসব বিভীষণরা আমাদের পিঠে চুরি মারবে। এরা সুযোগ পেলে মুসলমানদেরকে কচুকাটা করবে। রোহিঙা-বসনীয় মুসলমানদের চেয়ে আমাদের অবস্থা অধিকতর করুণ হবে। এরা আমাদের অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা ও আচরণের সুযোগ নিচ্ছে। আমাদের সবধান হবার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে এখনই এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তেমন পদক্ষেপ না দিলেই কোটি কোটি মুসলমানকে অসহায়ভাবে মরতে হবে।
রচনাকাল: ৬ জানুয়ারী, ২০২০
রানার নিউজের সৌজন্যে