বাংলাদেশে ভিন্ন কৌশল গ্রহণের সময় এসেছে
মূল: জন ড্যানিলোভিজ: অনুবাদ: মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন
প্রায় শেষ হওয়া (২০২৩) বছরে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও মুক্ত গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের জন্য ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে। এই বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করে, যা বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দল, এবং সুশীল সমাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এ বছরওয়াশিংটন ও ঢাকায় অনুষ্ঠিত উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হয়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যৌথ প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন। প্রায় পুরো বছর আমেরিকা বাংলাদেশে গণগণÍ্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবার ওপর গুরুত্বারোপ করে, যা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সম্পর্ককে আরো কার্যকর ও সম্প্রসারিত করতে সহায়তা করবে। উল্লেখ্য, মে মাসে ঘোষিত ভিসানীতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমেরিকা সীমিত সংখ্যক বাংলাদেশীর ভিসা বাতিল করে। এই পদক্ষেপ ছিল অবাধ ও মুক্ত নির্বাচনের প্রচেষ্টাকে কার্যকর করতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল বিশেষ।
এমন পরামর্শ তথা চাপ সত্বেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে আমেরিকার পরামর্শ প্রচেষ্টা দৃশ্যত ফলদায়ক হয় নি। শেখ হাসিনা সরকার আমেরিকার অব্যাহত পরামর্শ তথা আহŸান মোতাবেক রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংলাপের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করে । অক্টোবরের শেষের দিকে ঢাকার রাজপথে সরকারী ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্ধ শুরু হওয়ায় (আমেরিকা) অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে সঙ্গবদ্ধ হয়। নির্র্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আরেকটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কতোখানি বৈধ হবে, ভোটাররা কতোটা ব্যাপকহাবে এই নির্বাচনে অংশ নেয় তার ওপরই এই একতরফা নির্বাচনের সফলতা তথা বৈধতা নির্ভর করবে। বিগত নির্বাচনসমূহে বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচন ২০১৪ সালে (সফল), ১৯৯৫ সনে (আংশিক সফল) ১৯৮৮ সনে (আংশিক সফল) ২০২৪ সালের নির্বাচন কেমন ন্যায়সঙ্গত হবে তা দেখার বিষয়।
এমন পরামর্শ তথা চাপ সত্বেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে আমেরিকার পরামর্শ প্রচেষ্টা দৃশ্যত ফলদায়ক হয় নি। শেখ হাসিনা সরকার আমেরিকার অব্যাহত পরামর্শ তথা আহŸান মোতাবেক রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংলাপের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করে । অক্টোবরের শেষের দিকে ঢাকার রাজপথে সরকারী ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্ধ শুরু হওয়ায় (আমেরিকা) অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে সঙ্গবদ্ধ হয়। নির্র্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আরেকটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কতোখানি বৈধ হবে, ভোটাররা কতোটা ব্যাপকহাবে এই নির্বাচনে অংশ নেয় তার ওপরই এই একতরফা নির্বাচনের সফলতা তথা বৈধতা নির্ভর করবে। বিগত নির্বাচনসমূহে বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচন ২০১৪ সালে (সফল), ১৯৯৫ সনে (আংশিক সফল) ১৯৮৮ সনে (আংশিক সফল) ২০২৪ সালের নির্বাচন কেমন ন্যায়সঙ্গত হবে তা দেখার বিষয়।
সংলাপ ও সমঝোতার জন্য যথেষ্ঠ প্রচেষ্টা চালানো সত্বেও তা ফলদায়ক হয় নি। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্টের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হবে তা পুন:মূল্যায়নের সময় এসেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আক্রমণ, ইসরাইলে হামাসের সন্ত্রাসী হামলা এবং (ইসরাইলের) প্রতিক্রিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তার প্রতি চীনা হুমকির মুখে দুনিয়াব্যাপী অস্থিরতায় সময়ে শেখ হাসিনা সরকারের সাথে আমেরিকার সম্পর্কের উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। তদুপরি, আমেরিকা তার সীমান্তে সংকটজনকি পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। দেশটি গুরুতর আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এমন অবস্থায় আমেরিকা তার (চাবিগুলোর) যেটিকে যেখানো ঘুরিয়ে ব্যবহার করলে কতোখানি ফলদায়ক হতে পারে তা প্রশ্নবোধকই থেকে যাচ্ছে।
বাইডেন প্রশাসন এবং যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস যৌথভাবে এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারে। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত পিটার হাস’কে শলা-পরামর্শের জন্য ডেকে আনা যুক্তিসংগত হবে। এটা তার কাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়াকে সহজতর করবে। রাষ্ট্রদূত হাস এবং তার সহযোগীরা গত একবছর অচিন্তনীয় চাপের মুখে অসাধারণ কাজ করেছেন এবং আমেরিকার উচ্চাবিলাসী লক্ষ্যার্জনে প্রত্যাশিত সাফল্য না আসায় তাদেরকে অভিযুক্ত করা উচিত হবে না । যেহেতু তারা বিকল্প (পন্থা) পর্যালোচনা করেন, আমেরিকার কর্মকর্তারা কংগ্রেসের সাথে পরামর্শ করে সবগুলো বিকল্পই পর্যালোচিত হওয়া উচিত, যেগুলো বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মসূচিকে প্রভাবিত করে, যা প্রকৃত অর্থে একনায়কতান্ত্রিক সরকার টিকে থাকতে সহায়তা করে। —- এই ক্ষেত্রে আমেরিকান উন্œয়ন সংস্থাগুলোর কর্মকান্ড পর্যালোচিত ও পুন:নির্ধারিত উচিত। বিশেষায়িত সংস্থাসহ জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মতো বহুপাক্ষিক সংস্থার মাধ্যমে (বাংলাদেশের) উন্নয়ন কর্মকান্ড হস্তান্তর হওয়া বিধেয়।
ভিন্নমতকে দমন করার নীতি হতে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে সরে না আসা পর্যন্ত এর সশস্ত্র বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দেয়া সহযোগিতা স্থগিত রাখা উচিত। কারণ এইসব সংস্থা শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন দেয়া অব্যাহত রেখেছে। উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগের মতো বার্ষিক অংশীদারিত্বমূলক সংলাপ,সামরিক ও অর্থনৈতিক আলোচনাও বন্ধ রাখা উচিত। এতদব্যতীত বাংলাদেশের অশোভন আচরণের প্রেক্ষিতে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাধিকার ব্যবহার করা উচিত। সর্বোপরি, বাংলাদেশে শ্রমজীবীদের অধিকার ক্রমাগত হুমকির মুখে থাকায় তৈরি পোশাক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারী করা যায় কি না, তা স্থির করতে বাইডেন প্রশাসন ও কংগ্রেসের গভীরভাবে ভেবে দেখা জরুরী। একইভাবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এবং সুশীল সমাজের সক্রিয় ব্যক্তিবর্গের ওপর সরকারের শক্তি প্রয়োগের প্রেক্ষিতে তাদের সমর্থনে ওয়াশিংটনের নতুন পন্থা খুঁজে দেখা উচিত।
কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে বাংলাদেশের ঝুঁকে পড়ার প্রেক্ষিতে গত ১৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র যেসব কৌশল অবলম্বন করছে, তাদের মধ্যে (অবাধ) নির্বাচন সর্বাধিক গুরুুত্ব পেয়েছে । গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অনেকটা ব্যবসায়িক নীতির মতো মনে হয়েছে। বর্তমান পরিবেশে এটা মনে করা মোটেই সঠিক নয় যে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি এর সমর্থনের নীতি হতে সরে দাঁড়াবে। কিংবা ভারত, চীন এবং রাশিয়ার সাথে (বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে) এক কাতারে জড়ো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যৌক্তিক বিকল্প হবে (বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য) তার উদ্যোগকে আরো জোরদার করা এবং গণতান্ত্রিক দেশগুলো যেন তার নেতৃত্বকে সমর্থন তথা অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করা । য্ক্তুরাষ্ট্রের উচিত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পথে ফিরে আসলেই তাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে সাহায্য করা। তা না হওয়া পর্যন্ত খারাপের দিকে (বাংলাদেশে) ভালো অর্থ (আমেরিকার সহযোগিতা) নিক্ষেপ (প্রদান) বন্ধ রাখা। তাহলেই আমেরিকা কাঙ্ঘিত ফলাফল (বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা) অর্জন করতে পারবে।
জন ড্যানিলোভিজ পররাষ্ট্র মণÍ্রালয়ের অবসরপ্রাপ্ত বয়োজ্যাষ্ঠ কর্মকর্তা, দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়ে যার ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার কর্মজীবনে জন ড্যানিলোভিজ আমেরিকার সবচেয়ে বিপজ্জনক ও চ্যালেঞ্জিং কূটনৈতিক পদগুলির কয়েকটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের ঢাকা, দক্ষিণ সুদানে জুবায় আমেরিকান দূতাবাসে ডেপুটি চীপ অব মিশনে এবং পাকিস্তানের পেশোয়ারে আমেরিকার কনস্যুলেট জেনারেলে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।