কারো সহযোগিতা ছাড়াই মহাদেবপুরে সুস্থ হলেন দু’জন
কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ: মহাদেবপুর উপজেলার ওরা দু’জন প্রাণঘাতি করোনভাইরাসের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করে অবশেষে জয়ী হয়েছেন, কারো সহযোগিতা ছাড়াই। মঙ্গলবার তাদেরকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। খুলে দেয়া হয়েছে বাড়ীর লকডাউন। কিন্তু তেমন কোন সহযোগিতা করেননি কেউ। না উপজেলা প্রশাসন, না স্বাস্থ্য বিভাগ। বরং এ যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে তাদের। ওরা হলেন, উপজেলা সদরের দক্ষিণ দুলালপাড়ার ফেরদৌসী আকতার আশা ও সদর ইউনিয়নের সিদ্দিকপুর গ্রামের সুজিত কুমার।
আশা জানান, তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি ডেন্টাল চেম্বারে কাজ করতেন। গত ৭ এপ্রিল তিনি বাড়ী আসেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কোন লক্ষণ তার ছিলনা। ঢাকা থেকে আসার কারণে স্বাস্থ্য কর্মীরা গত ২২ এপ্রিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে তার নমুনা সংগ্রহ করেন। ২৯ এপ্রিল থানা পুলিশ তাদের বাড়ী লকডাউন করে দেয়। কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্ট তাকে জানানো হয়নি।
তিনি জানান, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ্য ছিলেন বলে তার চলাফেরায় কেউ বাধা দেয়নি। কিন্তু লক ডাউনের পর থেকে পাড়ার লোকজন তাদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছেন। কেউ কোনরকম সহযোগিতা তো করেইনি, বরং তাদেরকে সকলেই অবহেলা করেছে। তাদের খাবার নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। এর পাঁচ দিন পর ৪ মে বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের বাড়ীর কাছে গিয়ে খাবার রেখে ছবি তুলে নিয়ে গেছেন। ৬ মে দ্বিতীয়বার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া তাদের অবস্থার আর কেউ খোঁজ নেয়নি।
তিনি জানান, প্রশাসনে বার বার ফোন করলেও কেউ তাতে সারা দেয়নি। এমনকি দ্বিতীয়বার পরীক্ষার ফলাফল জানার জন্য বার বার ফোন করলেও কেউ রিসিভ করেনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, রাণীনগরে আক্রান্তদের হাসপাতালে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার বেলায় কোন চিকিৎসাই করা হয়নি।
অপরজন উপজেলার সদর ইউনিয়নের সিদ্দিকপুর গ্রামের সুজিত কুমার জানান, তিনি ঢাকার খিলগাঁয়ের একটি ফার্মেসীতে সেলস্ ম্যান কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে কাজ করতেন। গত ২০ মার্চ তিনি ঢাকা থেকে বাড়ী আসেন। কিন্তু জ্বর, কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট বা করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কোন লক্ষণই তার ছিলনা।
ঢাকা থেকে আসার কারণে স্বাস্থ্য কর্মীরা এক মাস চার দিন পর গত ২৪ এপ্রিল বকাপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তার নমুনা সংগ্রহ করে। কিন্তু তাদেরকে কোন ফলাফল জানানো হয়নি। তিনি জানান, ঢাকা থেকে বাড়ী আসার পর থেকে গত প্রায় দেড় মাস ধরে তিনি স্বাভাবিক চলফেরা করছেন। এমনকি ২৯ এপ্রিল সকালে তিনি মহাদেবপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে একটি সেলুনে চুল কেটে এসেছেন। কিন্তু দুপুরে তাদের বাড়ী লকডাউন করার পর থেকে স্থানীয়রা তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪ এপ্রিল খাবার দেয়া ছাড়া আর কোন সহযোগিতা করা হয়নি বলেও তিনি জানান।
আশা ও সুজিত দুজনেই জানান, একমাত্র মনোবলই তাদেরকে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করেছে। সুস্থ হয়ে তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিক হিসাবে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্যও তারা ধন্যবাদ জানান।