বাংলাদেশের একুশের প্রথম প্রহরের সঙ্গে মিল রেখে জাতিসংঘের সামনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত
পিবিসি নিউজ: বাংলাদেশের একুশের প্রথম প্রহরের সঙ্গে মিল রেখে শনিবার নিউইয়র্ক সময় দুপুর ১টা ১ মিনিটে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। মহান একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙ্গালীর চেতনা মঞ্চের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপিত হয়।
কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ প্রকোপের মধ্যে নিউইয়র্ক সিটির স্বাস্থবিধি মেনে উপস্থিত সর্বকনিষ্ঠ শিশু ৬ বছরের অনন্যা রায় প্রিয়ার পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেট, বিভিন্ন রাজনীতিক, পেশাজীবী, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, সাংষ্কৃতিক এবং আঞ্চলিক সংগঠনের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচী উদযাপিত হয়। এর মধ্য দিয়ে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙ্গালীর চেতনা মঞ্চের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর ৩০ বছর পূর্তি হল।
বরফে আচ্ছাদিত নিউইয়র্ক সিটির হাঁড় কাপানো ঠান্ডার মধ্যে নিউইয়র্ক সময় দুপুর ১২টার মধ্যেই বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অভিবাসী বাংলাদেশীরা জাতিসংঘের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় সকলে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ‘একুশের গান’ (আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি) পরিবেশন করলে অমর একুশের শোকাবহ আবহের সৃষ্টি হয়।
দুপুর ১.০১ টায় সকলে ১ মিনিট নীরবতা পালন করার পর শহীদ মিনারে পুষ্পাঘ্য অর্পণ কর্মসূচী শুরু হয়। একে একে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পক্ষে মিনিস্টার ও দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ নুরে আলম ও প্রথম সচিব (প্রেস) মো: নুর এলাহি মিনা শহীদ মিনা, বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউইয়র্ক এর পক্ষে ডেপুটি কনসাল জেনারেল এস. এম নাজমুল হাসান শহীদ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ফরাছত আলীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিরা, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ এথলেটিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এভোকেট আব্দুল রকিব মন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন আজমলের নেতৃত্বে নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগ, বাঙালির চেতনা মঞ্চের পক্ষে সাখাওয়াত আলী ও আবদুর রহিম বাদশা ও মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের পক্ষে বিশ্বজিত সাহা ও শুভ রায়, আওয়ামী স্বেচ্ছা সেবক লীগের সভাপতি নূরুজ্জামান সরদার এর নেতৃত্বে, যুগ্ম সম্পাদক ময়জুর লস্কর জুয়েলের নেতৃত্বে জাতীয় শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এর পক্ষে শিতাংশ গুহ, ওবায়দুল্লা মামুনের নেতৃত্বে একুশের চেতনা মঞ্চ, অনুপ দাশ ডান্স একাডেমীর পক্ষে আলপনা গুহ, সুচিত্রা সেন মেমোরিয়াল ইউএস এর ফাউন্ডার গোপাল সান্যাল, গৌরি প্রসন্ন মজুমদার স্মরণ সংসদ এর পক্ষে স্বাধীন মজুমদার, রাজ গৌরীপুর সংসদ এর পক্ষে সার্জেন্ট (অবঃ) মোস্তফা আহমেদ, কবি রওশন হাসান, স্বপন দেবনাথ, মুকিত হায়দার, আব্দুস শহীদ প্রমুখ। এছাড়া বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগ, যুক্তরাষ্ট্র জাসদ, বাংলাদেশ স্পোর্টস ফাউন্ডেশন, লাগার্ডিয়া কলেজ ছাত্র সংসদ, আবাহনী ক্রীড়াচক্র, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ ক্রীড়া চক্র, নোয়াখালী সমিতি, বিয়ানীবাজার সমিতি, সিলেট বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, বৃহত্তর সিলেট গণদাবী পরিষদ, রাজনগর উন্নয়ন পরিষদ শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাঙালির চেতনা মঞ্চের কর্মকর্তা আবদুর রহিম বাদশা।
মোট ৩০টি সংগঠন বাংলাদেশ ও আমেরিকান পতাকা দিয়ে শহীদ মিনার চত্বরটি সাজিয়ে উদ্যোক্তারা জাতিসংঘের সামনে শহীদ দিবস পালনের ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন করেন।
অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তারা গত ৩০ বছর ধরে জাতিসংঘের সামনে শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য নিউইয়র্ক সহ আমেরিকার বাংলা সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক-আঞ্চলিক সংগঠন, কবি-লেখক-সাহিত্যিকসহ অভিবাসীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বক্তারা বলেন, অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বের সব প্রান্তে উদযাপিত হচ্ছে। একুশে ফেব্রুয়ারীর ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের’ স্বীকৃতি আদায়ে প্রবাসীদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। শহীদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতিকে চিরজাগ্রত রাখার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করে যেতে হবে সকলকে।
উল্লেখ্য, বাঙালির রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ২১শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এরপর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদায় সারা বিশ্বে একযোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।