ইরানের প্রভাব কমাতে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে উসকে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
পিবিসি নিউজ : যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন কোনো আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দেয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমেরিকা ফিরে এসেছে। আমরা মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ইরানের পরমাণু সক্ষমতা অর্জনের উচ্চাভিলাষজনিত সমস্যাগুলো নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় রয়েছি।’ আর প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শাসন শুরুর পর বিদেশের মাটিতে মার্কিন বাহিনীর প্রথম আক্রমণ হয়েছে ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে ইরানপন্থী প্রতিরোধযোদ্ধাদের ওপর।
[content-egg module=AE__amazoncom]
এই হামলার বৈধতা নিয়ে এরই মধ্যে কংগ্রেসে প্রশ্ন উঠেছে। কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই এ হামলা চালানো হয়। সিনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটির সদস্য সিনেটর টিম কাইন বলেছেন, মার্কিন নাগরিকদের জানার অধিকার আছে, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া কিভাবে এ ধরনের হামলা করা হলো এবং এ ব্যাপারে প্রশাসনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা কী?
ইরান বলেছে, এই হামলা, ওয়াশিংটনের ‘সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাসবাদের নতুন ধাপ’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, এটি ইরানের জন্য একটি সতর্কবার্তা। তারা যেন দায়-দায়িত্বহীনভাবে কোনো কাজ না করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সাফাই, সিরিয়ায় যাদের ওপর হামলা করা হয়েছে তারা ইরাকে মার্কিন ঘাঁটি ও কূটনৈতিক মিশনে হামলার সাথে জড়িত।
সিরিয়া এ হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ অভিহিত করে ‘জঙ্গলের আইন’ অনুসরণ না করতে আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু সে আহ্বান কানে তোলার লোক সম্ভবত নন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হলে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া হামলা চালাতেন না। ট্রাম্প নির্বাচনে পরাস্ত হয়েছেন বটে তবে উত্তরসূরির মধ্যেও তারই ছায়ামূর্তি যেন স্পষ্ট। ট্রাম্প প্রতিদিন কত মিথ্যা বলতেন তার হিসাব রাখত একটি গ্রুপ। পত্রিকায় রিপোর্টও বেরুত। এখন বলা হচ্ছে, বাইডেনও মিথ্যা বলেন, তবে ট্রাম্পের চেয়ে সংখ্যায় কম। এই যা তফাৎ দুজনের। অর্থাৎ অভিযোগ মতে, আইন-কানুন না মানার তথা জঙ্গুলে আইনে চলার প্রবণতা আছে এই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের মধ্যেও।
বাইডেন ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের মধ্যে মিল আছে। বিদেশনীতিতে ইরানই তাদের প্রথম টার্গেট। মনে হচ্ছে, এবার তারা ইরান ইস্যু নিয়েই কোমর বেঁধে নামবেন। সেই আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বেশ কিছু ঘটনা একযোগে ঘটতে শুরু করার মধ্য দিয়ে।
ব্লিঙ্কেন-বাইডেনের অ্যাকশনের পরই ইসরাইলের একটি কার্গো জাহাজে বিস্ফোরণ ঘটে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। জাহাজের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। এদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোর গলায় ঘোষণা করে দিয়েছেন, এটা স্পষ্টই ইরানের কাজ। বলেছেন, ‘ইরান হলো ইসরাইলের সবচেয়ে বড় শত্রু। আমি তাদের হামলা থামিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।
আমরা পুরো অঞ্চলজুড়ে ইরানকে আক্রমণ করব।’ তার ঘোষণার আগেই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে ইসরাইলি বিমান বাহিনী অনেকবার হামলা চালিয়েছে। ইসরাইল বলেছে, ‘ইরানি টার্গেটে হামলা চালানো হয়েছে এবং তা তাদের জাহাজে হামলার বদলা হিসেবেই।’ কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে জাহাজে হামলার যে অভিযোগ তারা তুলেছেন তার পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করার প্রয়োজন বোধ করেননি নেতানিয়াহু। ধরে নেয়া যায়, ইরাকে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যেমন মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করিয়েছিল তেমনই একটি ছক আবারো যেন আঁটা হচ্ছে।
সর্বশেষ জানা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএকে দিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করানোর প্রক্রিয়া চলছে। ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ ২০ শতাংশে উন্নীত করার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এই প্রস্তাব নিতে পারে আইএইএ গভর্নিং বোর্ড। এর পেছনে মার্কিন প্রশাসনের ইঙ্গিত রয়েছে। বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রকে আবারো ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি মেনে চলা একটি বিশ্বশক্তি’ হিসেবে দেখাতে চান। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগ দেয়ার কথা বলেছেন।
ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে একযোগে কাজ করার কথা বলেছেন এবং ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তিতে ফিরে আসার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই চুক্তিতে যোগ দেয়ার জন্য তিনি ইউরোপীয় মিত্রদের দিয়ে ইরানের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের একটি প্রস্তাব দেন। ইরান সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, “জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত মার্কিন প্রশাসনের নীতি-অবস্থানে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি। বাইডেন প্রশাসন সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের’ নীতিই অনুসরণ করে যাচ্ছে।” ইরান আরো বলেছে, ‘আমেরিকাকে অবশ্যই অবৈধ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসতে হবে। এ জন্য কোনো আলোচনা বা নিরাপত্তা পরিষদে নতুন প্রস্তাব পাসের প্রয়োজন নেই।’
ইরান যে যুক্তি দিচ্ছে তার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কারণ দেশটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল এবং ইরানের ওপর অন্যায়ভাবে অবৈধ অবরোধ আরোপ করেছে। এখন আলোচনায় বসতে হলে অবরোধ তুলে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আগে সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে। তার আগে কোনো আলোচনা হতে পারে না। এই সদিচ্ছার প্রমাণ না পেলে কোনো দেশ কেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একসাথে কাজ করবে?
ইরান আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। তবে উভয় পক্ষ পরমাণু চুক্তি মেনে চলবে এমন একটি সমঝোতায় পৌঁছার ব্যাপারে কূটনৈতিক প্রয়াস চালিয়ে যেতে প্রস্তুত থাকবে বলে জানিয়েছে। অনেকের মতে, এটি হলো বাইরের লোকদেখানো বক্তব্য। তলে তলে হয়তো ওয়াশিংটন ভিন্ন ঘুঁটি চালছে আইএইএকে দিয়ে। ইরানের পার্লামেন্ট গত ডিসে