ওবায়দুল কাদের আপনি চুমু খাবেন কেন? ইয়াবা বদির হাতের পুরি খান!
‘সাত দিন ধরে ধৈর্য ধরেছি। আজকে পুলিশকে অপমান করা হয়েছে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে গোলাগুলি করতে করতে আসবে, তো তাদেরকে কী বল প্রয়োগ করবে না কি চুমু খাবে?’ হুবহু এই কথাটিই একটি টিভি সাক্ষাৎকারে সরাসরি বললেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ায়দুল কাদের।
এই বক্তব্য শুনে একজন বলছেন, ‘শাহজান খান’ থেকে ‘চুমু খান’ ভালো, কেননা চুমু খেতে প্রেম লাগে, আর ধর্ষণ করতে শক্তি লাগে।’
আমি বলি কী, কাদের সাহেব, আপনি কোমলমতি শিশুদের বাঁচতে চাওয়া আন্দোলনে গিয়ে চুমু খেয়ে ক্ষমা চাওয়ার মতো শিক্ষা, সংস্কৃতি বা রুচি অর্জন করতে শিখবেন কী আর এ জনমে?
ইয়াবা বদির হাতে পুরি খাওয়া বরং আপনার স্বাস্থ্য ও জনপ্রিয়তার জন্য ক্ষতিকর। সড়ক মন্ত্রী হিসেবে আপনি যদি ৭ দিন অপেক্ষা না করে পরের দিনই শিশুদের এই সুশৃঙ্খল আন্দোলনে একাত্ম হয়ে, নাটক করে হলেও ওদের দাবি মেনে নিয়ে চুমু খেতেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দলকে এতটা কলঙ্কিত হতে হতো না। ওরা চাইছিলো এই অহেতুক মৃত্যুর থেকে বাঁচানোর জন্য ব্যবস্থা নেবে সরকার।
শিশুরা চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছিল কতটা অদক্ষ ড্রাইভারে আর ফিটনেসবিহীন গাড়িতে ভরে গেছে দেশটা। স্বয়ং আইন প্রণেতা মন্ত্রী থেকে আইন রক্ষাকারী সংস্থার লোকেরা কীভাবে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছেন। ওরা চোখে আঙুল দিয়ে পুরো দেশটাকে দেখিয়েছে।
কাদের সাহেব, কোমলমতি শিশুদের প্রতি পুলিশের আচরণ বাড়াবাড়ি রকমের ছিল। বুঝতে পারেন নাই, এই মাসুম শিশুরা চুমু খেয়ে বড় হয়ে উঠতে চায়। বদির সঙ্গে পুরি খেলে ভোট চলে যায়, আর শিশুদের বকা খেয়েও প্রতিদানে চুমু খেলে ভোট বাড়ে।
জানেন তো, জনতাই সকল ক্ষমতার উৎস? রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক এই জনগণ। আপনি যখন মন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন থেকে এই মহান জনগণের শপথধারী একজন সেবক মাত্র। তাদের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে আপনার সরকার বাধ্য।
দুটি স্কুল ড্রেস পরা শিশুকেই শুধু থেতলে দেয় নাই ওই উচ্ছৃঙ্খল বাস। সব মা-বাবার আদরের ধনটিকেই যেন থেতলে যেতে দেখেছে সবাই। শিশুদের প্রতি আমাদের পরম অনুভূতিকে থেতলে দিয়েছে এই ঘটনা। দেশের প্রায় ছয় কোটি সুবিধাপ্রাপ্ত ফেসবুকবাসী এ বিভৎস দৃশ্য দেখে যখন বাকরুদ্ধ, তখন একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর নির্বোধের মতো ‘ড্যাম কেয়ার’ হাসি দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা।
বাধ্য হয়ে মানুষ পথে নামে। প্রতিবাদে পথে পথে নেমে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে স্কুল ড্রেস পরা ছেলে মেয়ে। তাদের দাবি নিরাপদ সড়ক পথ। তারা অদক্ষ বাস-ট্রাক ড্রাইভারের হাতে মাংসপিণ্ড হতে চায় না।
জানেন তো, বিতর্কিত ভোট বলে এমনিতেই বিরুদ্ধ পক্ষ মুখিয়ে আছে। কেন শিশুদের ন্যায্য দাবি সেবক হিসেবে মেনে নিয়ে পথে এসে চুমু না খেয়ে ‘গুজব’ বাহিনীর হাতে পরিস্থিতি তুলে দিলেন?
সড়ক পরবিহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর হিসেবে প্রতিদিন সারা দেশে সড়ক র্দুঘটনায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ৩০ জন। সে অনুযায়ী বছরে নিহতের সংখ্যা দাড়ায় ১০ হাজার ৮শ’ জন। আবার বিশ্বব্যাংকের হিসেবে বছরে ১২ হাজার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রেকর্ড অনুযায়ী, ২০ হাজার মানুষ সড়ক র্দুঘটনায় মারা যান।
বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এআরআই) এবং নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পরসিংখ্যান অনুযায়ী, সড়ক র্দুঘটনায় প্রতি বছর ১২ হাজার মানুষ মারা যান। এভাবে মৃত্যুর মিছিল বাড়তেই থাকছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব, লজ্জাবোধ থাকলে, চুমু খেয়ে এই অদক্ষতার প্রায়শ্চিত্ত করতে পারতেন। তাতে প্রেম, জনপ্রিয়তা বা ভোট বাড়তে পারতো। ডিজিটাল বাংলাদেশের মেধাবী প্রজন্ম কিন্তু এনালগ বলে আপনাকে আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলে দেবে। এভাবে গায়ের জোরে কথা বললে তারাও কিন্তু চুমু দিবে না।
লেখক: তরিক রহমান, হেড অব আইটি, দৈনিক যুগান্তর